গত প্রায় একশো বছর ধরে আমরা মুসলিমরা চেষ্টা করেছি আধুনিক জাতিরাষ্ট্র, গণতন্ত্র আর ধর্মনিরপেক্ষতার ছাঁচে নিজেদের গড়তে। জাতে উঠতে গিয়ে আমরা বিসর্জন দিয়েছি আল ওয়ালা ওয়াল বারা। এক উম্মাহ এক দেহ – এর চিন্তা বের হয়ে পরম বিশ্বাসে আকড়ে ধরেছি নোংরা জাতীয়তাবাদকে। নিজেদেরকে মুহাম্মাদ এর উম্মাহ হিসেবে পরিচয় দেয়ার বদলে আমরা এখন কেউ বাংলাদেশের মুসলিম, কেউ সৌদির মুসলিম, কেউ ভারতের মুসলিম। আমাদের আনুগত্য এখন আর আল্লাহ্র প্রতি না, আমরা এখন আনুগত্য করি সংবিধান, পতাকা আর রাষ্ট্র নামের মূর্তিগুলোর। আল্লাহ্র আইনকে ত্যাগ করে মানুষের বানানো আইনকে আমরা নিজেদের ধর্ম বানিয়ে নিয়েছি। আর সেই সাথে ছেড়ে দিয়েছি সম্মান, মর্যাদা ও শক্তির পথ। নিরস্ত্র হয়ে আমরা ঈমান এনেছি গণতন্ত্র আর গান্ধীবাদের ওপর। আমরা ধরে নিয়েছি বিপদের সময় রাষ্ট্র, আদালত, সংবিধান – নামের মূর্তিগুলো আমাদের রক্ষা করবে।
আমরা প্রাণপনে চেষ্টা করেছি খাপ খাওয়াতে। সেজন্য নিজেদের আত্মপরিচয় ছুড়ে ফেলেছি। নতজানু হয়েছি। অপমানিত হয়েছি। কিন্তু প্রতিবার এই বিশ্বব্যবস্থা – এই ওয়ার্ল্ড অর্ডার – এই সিস্টেম আমাদের সাথে গাদ্দারি করেছে। এবং যতোক্ষন পর্যন্ত না এই সিস্টেম ভেঙ্গে ফেলা হবে ততোক্ষণ এই চক্র চলতেই থাকবে। আমরা আজ খাঁচায় বন্দী। যে খাঁচায় স্বেচ্ছায় আমরা ঢুকেছিলাম। একের পর এক গণহত্যা আর আগ্রাসনের এ চক্র থেকে বের হতে চাইলে আগে বের হতে হবে গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা আর গান্ধীবাদের খাঁচা থেকে। অত্যাচারের শেকল থেকে মুক্ত হতে হলে আগে চিন্তাকে মুক্ত করতে হবে জাতীয়তাবাদের ফাঁদ আর ব্রিটিশদের আঁকা মানচিত্রের বাঁধন থেকে। আমাদের বুঝতে হবে আমরা প্রথমে বাঙ্গালী-বাংলাদেশী, তুর্কি, সৌদি, পাকিস্তানী, ভারতীয়, আর তারপর মুসলিম না। আমরা প্রথমে মুসলিম এবং শেষ পর্যন্ত মুসলিম। তাওহিদ সবকিছুর আগে, এবং সবকিছুর ওপরে। আমাদের আনুগত্য কোন সীমান্ত, পতাকা কিংবা সংবিধানের প্রতি না, আমাদের আনুগত্য এক ও অদ্বিতীয় আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা-র প্রতি। এবং আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য একমাত্র দ্বীন হল ইসলাম। যমিন তাঁর, শাসনও তাঁর, সার্বভৌমত্বও তাঁর।
সেই সাথে আমাদের বুঝতে হবে, আমরা যতোই শান্তিবাদী হই না কেন আমাদের শত্রুরা কখনো আমাদের হত্যা করা থামাবে না। এই শান্তিবাদ অশান্তি ছাড়া আমাদের আর কোন কিছু দেয়নি। তাই কাফিরদের খুশি করার জন্যে গান্ধীবাদী হবার বদলে, আল্লাহ্কে খুশি করার জন্য তাঁর নির্দেশিত পথেই আমাদের চলতে হবে। যদিও সে পথ কঠিন হয়, যদিও সে পথ আমাদের অপছন্দ হয়। হাহুতাশ, গলাবাজি আর বাস্তববাদীতার নাম দিয়ে বাস্তবতা থেকে পালিয়ে বেড়ানো বন্ধ করে যখন আমরা এই কঠিন সিদ্ধান্তগুলো নিতে পারবো, তখন এবং শুধুই তখন পরিবর্তন আসবে। আল্লাহ্ আমাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, এবং নিশ্চয় তাঁর প্রতিশ্রুতি সত্য। কিন্তু আমরা সেই বিজয়ী কাফেলার অংশ হবো কি না, তা আমাদেরকেই ঠিক করতে হবে।