১৯শে এপ্রিল, ১৯৯৫। অ্যামেরিকা।

ঝলমলে স্নিগ্ধ সকাল।

পরিষ্কার আকাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে স্থির হয়ে থাকা সাদা মেঘ।

নগরের যান্ত্রিক কোলাহল তখনো জেঁকে বসেনি শান্ত সকালটার ওপর।

আটটা পঞ্চাশের দিকে শহরে ঢুকল একটা সাদা ফোর্ড এফ-৭০০ ট্রাক। মেইন রোড ধরে অলস গতিতে এগোল শহরের মাঝ বরাবর দাঁড়ানো মারে বিল্ডিংয়ের দিকে। ৯ তলা উঁচু সরকারি ভবনটাতে তখন শুরু হয়ে গেছে আরেকটা কর্মব্যস্ত দিনের তোড়জোড়। ৮.৫৭ এর দিকে একটা পাঁচ মিনিটের ফিউয জ্বালালো ট্রাকের চালক। ঠিক তিন মিনিট পর, টার্গেট থেকে এক ব্লক দূরে থাকা অবস্থায় জ্বালালো আরেকটা ফিউয, এবারেরটা দু-মিনিটের। বিল্ডিংয়ের ভেতর ডে-কেয়ার সেন্টারের নিচের ড্রপ অফ যোনে ট্রাকটা পার্ক করে সহজ স্বচ্ছন্দ ভঙ্গিতে গাড়ি থেকে নামল। শান্ত নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে ট্রাকের দরজা লক করে লম্বা লম্বা পা ফেলে বেরিয়ে গেল পার্কিং লট থেকে। অল্প সময়ে টার্গেটের আর নিজের মধ্যে দূরত্ব বাড়ানোর জন্য গেট থেকে বেরিয়ে এগোল কোনাকুনি।

৪,৮০০ পাউন্ড অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট, নাইট্রোমিথেন আর ডিসেল মিক্সচার নিয়ে যখন ট্রাকটা বিস্ফোরিত হলো ঘড়িতে তখন নটা বেজে দু-মিনিট। ট্রাকটা যেখানে দাঁড়িয়ে ছিল সেখানে তৈরি হলো ৩০ ফুট চওড়া ৮ ফুট গভীর খাদ। চুরমার হয়ে স্রেফ উধাও হয়ে গেল মারে বিল্ডিংয়ের এক-তৃতীয়াংশ। ভেঙে গুঁড়োগুঁড়ো হয়ে গেল আশেপাশের ২৫৮টা বিল্ডিংয়ের সব কাচ। শুধু ভাঙা কাচের উড়ন্ত ঝড়েই মারা পড়ল ৮ জন মানুষ। বিস্ফোরণের ৪ ব্লক রেডিয়াসের মধ্যে নানান মাত্রায় ধ্বংস কিংবা ক্ষতিগ্রস্ত হলো আরও ৩২৪টা বিল্ডিং। পুড়ল আশেপাশের ৮৬টা গাড়ি। পরে জানা যাবে, বিস্ফোরণের কারণে মোট ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৬৫২ মিলিয়ন ডলার। ৫,০০০ পাউন্ড টিনএনটির শক্তি নিয়ে বিস্ফোরিত হওয়া ট্রাকবোমার শব্দ ও শক্তি অনুভূত হলো ৫৫ কিলোমিটার দূর পর্যন্ত। বিস্ফোরণস্থল থেকে প্রায় ২৬ কিলোমিটার দূরের সিসমোগ্রাফে ধরা পড়ল রিখটার স্কেলে ৩.০ মাত্রার কম্পন। দিন শেষে জানা গেল ডে-কেয়ার সেন্টারের ১৯ শিশুসহ নিহত হয়েছে মোট ১৬৮ জন, আহত ৬৮০।

মারে বিল্ডিং এর সামনে রাইডার ট্রাকের অবস্থান
বিস্ফোরণের পর মারে বিল্ডিং

৯৫ এর ওকলাহোমা সিটি বম্বিং।

৬ বছর পর সেপ্টেমবরের এক সকালে হাইজ্যাক করা চারটি যাত্রীবাহী বিমান নিয়ে অ্যামেরিকার অর্থনৈতিক আর সামরিক কেন্দ্রে ১৯ যুবকের ইতিহাসের মোড় ঘোরানো হামলার আগে এ ঘটনা ছিল অ্যামেরিকার মাটিতে সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী হামলা।

এফবিআই এর ভাষ্য অনুযায়ী ওকলাহোমা সিটির বোমা হামলার পেছনে ছিল উপসাগরীয় যুদ্ধে সাহসিকতার জন্য বেশ অনেকগুলো সামরিক পদক পাওয়া ২৭ বছর বয়সী সাবেক আর্মি সার্জেন্ট টিমোথি ম্যাকভেই এবং তার দুই সহযোগী। হামলার দিন ওর পরনের টি শার্টে লেখা ছিল দুটো বিখ্যাত উক্তি। প্রথমটা ল্যাটিন, ভার্জিনিয়া রাজ্যের অফিশিয়াল মোটো,

‘Sic semper tyrannis (Thus always to tyrants)’

‘স্বৈরাচারীদের প্রাপ্য সর্বদা এমনই হয়।’

বলা হয়ে থাকে জুলিয়াস সিযারকে হত্যা করার সময় ব্রুটাস এ শব্দগুলো উচ্চারণ করেছিল। অ্যাব্রাহ্যাম লিঙ্কনকে গুলি করার পরপর জন উইলক্স বুথও নাকি চিৎকার করে বলেছিল একই কথা।

পরের কথাটা খাঁটি অ্যামেরিকান। অ্যামেরিকার তৃতীয় প্রেসিডেন্ট থমাস জেফারসনের বিখ্যাত উক্তি,

‘The tree of liberty must be refreshed from time to time with the blood of patriots and tyrants’

‘স্বাধীনতার বৃক্ষকে মাঝে মাঝে পুনরুজ্জীবিত করতে হয় দেশপ্রেমিক আর স্বৈরাচারীদের রক্ত দিয়ে।’

ম্যাকভেইয়ের হামলার টার্গেট ছিল মার্কিন সরকার, উদ্দেশ্য ছিল প্রতিশোধ। উপসারগরীয় যুদ্ধের পর আর্মি ছেড়ে আসা ম্যাকভেইয়ের চোখে মার্কিন সরকারব্যবস্থা ক্রমশ পরিণত হচ্ছিল এক নব্য স্বৈরতন্ত্রে। এমন ধারণার হবার মতো যথেষ্ট কারণও ছিল। ১৯৯৩ এ টেক্সাসের ওয়েইকোর এক কম্পাউন্ডে হামলা চালায় অ্যামেরিকান সরকার ও সেনাবাহিনী। কম্পাউন্ডটি ছিল মাউন্ট কারমেল নামের এক র‍্যাঞ্চের অংশ। প্রটেস্ট্যান্ট ধারার এক ধর্মীয় সংগঠন ঘাঁটি গেড়েছিল এখানে। নিজেদের ওরা পরিচয় দিত ব্র্যাঞ্চ ডাভিডিয়ানস নামে। নেতা হিসেবে মানতো ৩৩ বছর বয়সী ডেইভিড কোরেশকে। অনুসারীদের চোখে ডেইভিড ছিল ঈশ্বরপ্রেরিত নতুন মেসায়াহ (মসীহ)। ব্র্যাঞ্চ ডাভিডিয়ানদের বিশ্বাস ছিল কিয়ামত অত্যাসন্ন, আসন্ন মহাপ্রলয়ের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল ওরা।

ওকলাহোমা সিটি বম্বার - টিমোথি ম্যাকভেই

ডেইভিড কোরেশের বিরুদ্ধে যৌননির্যাতন এবং অবৈধ অস্ত্র মজুদ করার অভিযোগ তলিয়ে দেখতে ওয়ারেন্ট নিয়ে ওয়েইকোতে হাজির হয় মার্কিন সরকারি সংস্থা এটিএফ (ব্যুরো অফ অ্যালকোহল, টোবাকো অ্যান্ড ফায়ারআর্মস)। কোরেশের পক্ষ থেকে সহযোগিতার প্রস্তাব দেয়া হলেও সরকারি বাহিনী সিদ্ধান্ত নেয় সশস্ত্র অভিযান চালানোর। ট্যাংক, হেলিকপ্টার এবং সম্পূর্ণ সামরিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে হামলা চালানো হয় মাউন্ট কারমেলে। ব্র্যাঞ্চ ডাভিডিয়ানরা প্রতিরোধ করে। ৫১ দিনের অবরোধ ও লড়াইয়ের পর সরকারি বাহিনীর আক্রমণে মারা যায় ২৪ জন শিশুসহ মোট ৭৬ জন। দিনটি ছিল ১৯৯৩ এর ১৯ এপ্রিল। ওকলাহোমা সিটির বোমা হামলার ঠিক দু’ বছর আগের ঘটনা।

ব্র্যাঞ্চ ডাভিডিয়ানদের বিশ্বাসের সাথে একমত না হলেও ওয়েইকোর ঘটনাকে ম্যাকভেই দেখে সরকারের চরম মাত্রার সীমালঙ্ঘন, মাত্রাতিরিক্ত বলপ্রয়োগ ও আগ্রাসন হিসেবে। শুধু ম্যাকভেই না, সারা অ্যামেরিকাজুড়ে আরও অনেকের চোখেই এ ঘটনা ছিল মার্কিন সংবিধানের মূল চেতনাকে ছুড়ে ফেলা এবং স্বাধীনচেতা নাগরিকদের ওপর আশঙ্কাজনক গতিতে আধিপত্য বিস্তার করা এক নব্য স্বৈরতন্ত্রের আগ্রাসনের নমুনা। এমন এক স্বৈরতন্ত্র যা গ্লোবালিস্টদের স্বার্থ রক্ষা করে আর নিজ দেশের নাগরিকদের ওপর সেনাবাহিনী লেলিয়ে দেয়। ম্যাকভেই-এর ভাষ্যমতে ওকলাহোমার বোমা হামলার পেছনে মূল কারণ ছিল তিনটি,

ওয়েইকো এবং তার এক বছর আগে আইডাহোর রুবি রিজে ঘটে যাওয়া একই রকম আগ্রাসনের প্রতিশোধ।

স্বৈরাচারী কেন্দ্রীয় সরকারের মোকাবেলায় অ্যামেরিকানদের ব্যক্তিস্বাধীনতা রক্ষার চেষ্টা।

বিশ্বজুড়ে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি ও সামরিক আগ্রাসনের বাস্তবতা অ্যামেরিকার সামনে তুলে ধরা।

সীমালঙ্ঘনকারী স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে সহিংসতার ব্যবহারকে সমর্থন করে ম্যাকভেই বলে, অনিয়ন্ত্রিত সরকারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এধরণের হামলা ‘বৈধ’[1]। টার্গেট হিসেবে সরকারি ভবনকে বেছে নেয়ার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ম্যাকভেই জানায়, ‘আগ্রাসী শত্রু যখন কোনো একটি নির্দিষ্ট ঘাঁটি থেকে বারবার আক্রমণ করে তখন সঠিক সামরিক কৌশল হলো শত্রুকে তার ঘাঁটিতে আক্রমণ করা।’[2] মারে বিল্ডিংয়ে অফিস ছিল এটিএফ, এফবিআই এবং ডিইএ-এর; পাশাপাশি ছিল অ্যামেরিকান সিক্রেট সার্ভিস এবং ইউএস মার্শাল সার্ভিস এজেন্সির অফিসও।[3]

আদালতে নেয়ার সময় ম্যাকভেই

আত্মপক্ষ সমর্থনে ম্যাকভেই বলল,

‘নৈতিক এবং কৌশলগত দিক থেকে মারে বিল্ডিংয়ের ওপর বোমা হামলা সার্বিয়া, ইরাক কিংবা অন্য কোনো দেশের সরকারি ভবনের ওপর অ্যামেরিকার চালানো বোমা হামলার সমতুল্য। আমার নিজের দেশের সরকারের নীতিগুলো মূল্যায়নের পর আমার কাছে এই হামলাকে একটি গ্রহণযোগ্য সিদ্ধান্ত মনে হয়েছে। এ দৃষ্টিকোণ থেকে ওকলাহোমা সিটিতে যা হয়েছে তা অন্যান্য দেশের মানুষের ওপর অ্যামেরিকার বোমাবৃষ্টির চেয়ে আলাদা কিছু না।

ডে কেয়ার সেন্টারের ১৯ শিশুর মৃত্যু, ট্রাক বোমার ব্যবহার আর বেসামরিক নাগরিকদের হত্যার নৈতিকতা ব্যাখ্যা করে ম্যাকভেই বলে,

‘ওকলাহোমা সিটিতে রাস্তা আর সরকারি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অফিসের মাঝখানে একটা ডে-কেয়ার সেন্টারের অবস্থানের কারণ ছিল সুবিধা। কিন্তু যখন ইরাকের কথা আসে, যখন ইরাকের কোনো সরকারি ভবনে ডে-কেয়ার সেন্টার থাকে তখন সেটা হয়ে যায় ‘মানববর্ম’। ব্যাপারটা চিন্তা করে দেখুন। এসব বাস্তবতার আলোকে নৈতিকতা এবং ‘mens rea’ (অপরাধের ইচ্ছা) এর ব্যাপারে আমি জানতে চাই,

সত্যিকারের বর্বর কারা?

ম্যাকভেই, অ্যামেরিকান আর্মিতে থাকাকালীন সময়ের ছবি

ইরাকে বোমা ফেলার জন্য যেসব বিমান ব্যবহৃত হয়েছিল তার মধ্যে একটির নাম ছিল ‘দা স্পিরিট অফ ওকলাহোমা’, কী বিচিত্র! যখন মার্কিন বিমান অথবা ক্রুয মিসাইল ভিনদেশি মানুষের ওপর ধ্বংস বয়ে নিয়ে যায় তখন এই জাতি সেই আক্রমণকারীকে প্রশংসা আর বাহবায় ভাসায়। খুনিদের চালানো ধ্বংসযজ্ঞের দায়মুক্তির কত সুন্দর উপায়!

কিন্তু দুঃখজনকভাবে খুনের নৈতিকতা এতটা সোজা, এতটা বাহ্যিকতা নির্ভর না। সত্য কথা হলো, বিধ্বংসী অস্ত্র ব্যবহারের ক্ষেত্রে ট্রাক, বিমান কিংবা মিসাইলের ব্যবহারের কারণে কাজটার মৌলিক প্রকৃতি বদলায় না। দিন শেষে এগুলো সবই বিধ্বংসী অস্ত্র এবং এসব অস্ত্র ঠিক কীভাবে পৌঁছানো হচ্ছে তার কোনো মূল্য ওই সব মানুষের কাছে নেই, যাদের ওপর এসব অস্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে।

তোমরা স্বীকার করতে চাও বা না চাও, অন্য কোনো দেশে মার্কিন বোমা হামলার নৈতিক অনুমোদন দেয়ার মাধ্যমে তোমরাই ওকলাহোমা সিটিতে একই রকম হামলার অনুমোদন দিয়ে দিয়েছ।’[1]

ক্যাথলিক পরিবারের জন্ম নিলেও ম্যাকভেই-এর ভাষ্যমতে সে নিজ ধর্মের সাথে সম্পর্ক হারিয়ে ফেলেছিল। ২০০১ এর জুনে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হবার এক দিন আগে লেখা এক চিঠিতে ম্যাকভেই নিজের পরিচয় দেয় একজন অ্যাগনস্টিক বা সংশয়বাদী হিসেবে।

তবে ম্যাকভেই-এর হামলা এবং দৃষ্টিভঙ্গির পেছনে ধর্মীয় কোনো বিশ্বাস না থাকলেও কাজ করছিল অন্য এক মতাদর্শ। মার্কিন সেনাবাহিনী ছেড়ে আসার পর ম্যাকভেই যোগ দেয় নতুন এক বাহিনীতে যার নাম আরইয়ান রিপাবলিকান আর্মি (আর্য প্রজাতান্ত্রিক বাহিনী)।[2] ওকলাহোমা সিটির বোমা হামলার ব্যাপারে মার্কিন আদালত এবং এফবিআই এর অফিশিয়াল উপসংহারের ব্যাপারে সন্দিহান অনেকে আজও বিশ্বাস করে শুধু ম্যাকভেই না এ হামলার সাথে জড়িত ছিল আরও অনেকে, বিশেষ করে আরইয়ান আর্মির সদস্যরা।[3]

সেই সন্দেহকে জোরালো করে সত্তরের দশকে প্রকাশিত ‘দা টার্নার ডাইরিস’ নামের একটি উপন্যাস। একদিন সকাল ৯.১৫ মিনিটে এফবিআই এর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ট্রাক বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে অ্যামেরিকাজুড়ে বিল্পবের আগুন জ্বালিয়ে দেয়া একদল শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদীদের ঘিরে আবর্তিত হয় ‘দা টার্নার ডাইরিস’ এর কাহিনি। কল্পিত এ ট্রাকবোমা হামলার পর শুরু হওয়া বিপ্লবে পতন হয় মার্কিন সরকারের, শুরু হয় বিশ্বজুড়ে পারমাণবিক যুদ্ধ। এ যুদ্ধে শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদীদের সাথে লড়াইয়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় দুনিয়ার সব অশ্বেতাঙ্গ।

এপ্রিলের সেই সকালে বিস্ফোরক বোঝাই ট্রাক চালিয়ে নিয়ে যাবার সময় টিমোথি ম্যাকভেই-এর সাথে রাখা খামে ছিল ‘দা টার্নার ডাইরিস’ এর কিছু পৃষ্ঠা।


চিন্তাপরাধ বইয়ের ‘শ্বেত সন্ত্রাস’ প্রবন্ধ থেকে।

চলবে ইন শা আল্লাহ্‌


[1] McVeigh, Timothy J. (June 1998). "An Essay on Hypocrisy"

[2] Profile: Peter Kevin Langan, History Commons

[3] Evidence: White Racists Aided Mcveigh, https://bit.ly/2PtCZot

[1] Mcveigh Hints At Some Regrets, The Buffalo News, June 10, 2001

[2] Terrorist Attacks on American Soil: From the Civil War Era to the Present, J. Michael Martinez, p 306

[3]American Terrorist. Scientific American. Michel, Lou; Dan Herbeck (2001). 284. p. 167.