যখন একজন মানুষ স্পাইডার-ম্যান-সুপারম্যান জাতীয় কোন মুভি দেখে, অথবা রূপকথার কোন গল্প শুনে তখন তার মস্তিষ্কে দুটো বিপরীতধর্মী চিন্তা একসাথে কাজ করে। আমাদের মস্তিষ্কের যুক্তি নিয়ে কাজ করা অংশ আমাদের বলে দেয় আমরা যা দেখছি বা শুনছি তা অবাস্তব, অযৌক্তিক। অন্যদিকে আমাদের মস্তিষ্ক যে গল্পটা আমাদের উপস্থাপন করা হচ্ছে তার দিকে মনোযোগ দেয়। গল্পের চরিত্রের সাথে সহমর্মিতা অনুভব করে, গল্পের মধ্য ঢুকে যাবার একটা প্রবণতা কাজ করে। ধীরে ধীরে গল্পের সাথে নিজেকে সংযুক্ত অনুভব করে। আর এটাই স্বাভাবিক এভাবেই আমরা বাস্তব জীবনে সহমর্মিতা/সহানুভূতি অনুভব করি।

সমস্যা হল যতোক্ষন আমাদের লজিকাল ব্রেইন আমাদেরকে গল্পের যৌক্তিক ভুলগুলো ধরিয়ে দিতে থাকবে, ততোক্ষণ আমাদের পক্ষে গল্পের ভেতর পুরোপুরি ঢুকে যাওয়া সম্ভব হবে না। আর যতোক্ষণ আমরা সম্পূর্ণভাবে গল্পের ভেতর না ঢুকছি ততোক্ষণ সম্পূর্ণভাবে গল্পটাকে উপভোগ করা সম্ভব হবে না। স্পাইডার-ম্যানের ধারণাটা যে হাস্যকর, মাকড়শার অনেক বৈশিষ্ট্য পেলেও কেন স্পাইডার-ম্যানের হাত দুটোই থাকলো – এই জাতীয় চিন্তাগুলোকে, স্পাইডার-ম্যানের গল্পটা সত্য হতে পারে না – এই অবিশ্বাসকে সরিয়ে না দিলে স্পাইডার-ম্যানের গল্পের মজাটা পাওয়া সম্ভব না।

আর তাই আমাদের মস্তিষ্ক এসব ক্ষেত্রে এমন একটি অবস্থায় প্রবেশ করে যেখানে সে তার অবিশ্বাসকে সাময়িক সময়ের জন্য স্থগিত রাখে। সে যুক্তিকে সরিয়ে রাখে। সে তখন গ্রহণ করে কিন্তু পরীক্ষা করে না, বিশ্লেষণ করে না, বিচার করে না, বিবেচনা করে না। আবেগকে ক্রিটিকাল রিযনিং এর লাগাম থেকে মুক্ত করে দেয়। এই অবস্থাটাকেই বলা হয় Suspended disbelief.

সোশ্যাল মিডিয়ার মজাটা হল এই সবগুলো ব্যাপার একসাথে সোশ্যাল মিডিয়াতে চলে আসে। চিন্তার ব্যাপারটা হল সোশ্যাল মিডিয়াতে আমরা প্রায় সারাক্ষণ যুক্ত থাকি। আর বর্তমানে আমাদের ঝোঁক হল বাস্তব জগতের চাইতে, বাস্তব অভিজ্ঞতার চাইতে সোশ্যাল মিডিয়ার ইলিউশানকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া। অনেকগুলো মানুষ একসাথে বসে থাকে, কিন্তু পাশের মানুষটার চাইতে নিজের স্মার্ট-ফোনে নিউযফিড স্ক্রল করাকে তারা বেশি গুরুত্ব দেয়। আমরা সাসপেন্ডেড ডিসবিলিফের অবস্থায় ক্রমাগত স্ক্রল করে যাই। যুক্তি-বিবেচনাকে স্থগিত রেখে অটোমেটেড মেশিনের মতো লাইক-শেয়ার দিয়ে যাই। বিশ্লেষণ না করেই কোন কিছুকে শুনতে/পড়তে ভালো লাগলেই সেটা গ্রহণ করে ফেলি। খুঁটিয়ে দেখি না। ডিজিটাল অ্যামনেশিয়ার কারণে আমরা যা পড়ি তা মনে রাখি না। যা গ্রহণ করতে চাই তা আমাদের আত্মস্থ হয় না। মনোযোগ ধরে রাখার অক্ষমতার কারণে সহজেই অন্যমনস্ক হয়ে যাই। আর ব্লকবাস্টার মুভি দেখার প্রবণতার নিয়ে চিন্তার কারণে আপাত বোরিং বিষয়গুলোর চাইতে মশলাদার, উত্তেজক, সেনসেশেনাল বিষয়গুলোর প্রতি আমাদের আগ্রহ বেশি থাকে।