ধরুন, আগামীকাল পৃথিবীর কোন অঞ্চলে ইসলামী শরীয়াহ শাসন প্রতিষ্ঠিত হল। সত্যিকারের ইসলামী শাসন, সেক্যুলার সংবিধানের ওপর ‘ইসলামী প্রজাতন্ত্রের’ সাইনবোর্ড লাগানো কসমেটিক 'ইসলামী শাসন' না। বলুন তো, সেখানকার জিডিপি কেমন হবে? কোয়ালিটি অফ লাইফ কিংবা হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট ইনডেক্সে কতো নাম্বারে থাকবে ঐ ভূমি?
খুব একটা ভালো হবার কথা না। প্রায় নিশ্চিতভাবেই বলা যায় এধরণের যেকোন অঞ্চলকে প্রাথমিকভাবে মোকাবিলা করতে হবে প্রতিকূল এক অবস্থার। উন্নত কিংবা মধ্যম সারির দেশের মতো অবকাঠামো এবং অর্থনীতি সেখানে থাকবে না। না থাকাটাই স্বাভাবিক।
মনে করুন, মাল্টিন্যাশনাল ব্যাংকিং সিস্টেমের বিরুদ্ধে গিয়ে আপনি হালাল 'সমবায় ও বিনিয়োগ সমিতি' খুললেন। দুটোর মধ্যে কোন তুলনাই করাই মুশকিল হবে। মাল্টিন্যাশনাল ব্যাংকের স্কাইস্ক্রেইপার আর আপনার ছোট্ট দুই রুমের অফিসের মধ্যে থাকবে বিস্তর ফারাক। তার মানে এই না যে আপনার সমিতি কোনদিন স্কাইস্ক্রেইপারের মালিক হবে না। এক সময় হয়তো আপনি একশো স্কাইস্ক্রেইপারের থাকবে। কিন্তু আজ, এই মুহুর্তে, শুরুতেই আপনার সেই সামর্থ্য থাকবে না। এটাই বাস্তবতা।
কিন্তু আমরা -ইসলামকে ভালোবাসার দাবি করা এই আমরা-কি এই বাস্তবতাকে স্বীকার করতে রাজি? .বর্তমান পৃথিবীতে শরীয়াহ শাসিত কোন অঞ্চল গড়ে উঠলে সেটার দুটো বৈশিষ্ট্য থাকবে-
১। কামনাবাসনা পূরণ করার যথেচ্ছ স্বাধীনতা সেখানে থাকবে না
২। আধুনিক জীবনযাত্রার অনেকে সুবিধা সেখানে পাওয়া যাবে না, নিদেনপক্ষে প্রাথমিক পর্যায়ে।
সেক্যুলাররা এমন শাসনের বিরোধিতা করে প্রথম বৈশিষ্ট্যের কারণে।
শরীয়াহশাসিত অঞ্চলে কি ক্লাব, বার, ক্যাসিনো থাকবে? ডেইট করা যাবে? মদ খাওয়া যাবে? পার্টি করা যাবে? ওখানে কি পরীমণিদের পাওয়া যাবে? না গেলে, এমন দম বন্ধ হয়ে আসা মধ্যযুগীয় জায়গায় মানুষ থাকবে কিভাবে!
আর আরেকদল এদিক-সেদিকের নানা অজুহাত দিয়ে বিরোধিতা করবে দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্যের কারণে।
ওখানে কি এসি থাকবে? শপিং মল? সিনেমা হল? ফাস্ট ফুড? নেটফ্লিক্স? ক্যাবল টিভি, মিউসিক?
ওখানে কি থাকবে সুন্দর রাস্তা, উঁচু উঁচু বিল্ডিং আর ঝা চকচকে শহর ?
ওখানে কি উচ্চশিক্ষার সুযোগ থাকবে? ভালো ক্যারিয়ার গড়া যাবে? মেইন্টেইন করা যাবে সুন্দর লাইফস্টাইল?
আচ্ছা আর কিছু না হোক টাইলসসহ বাথরুম? হাই কমোড? বাথরুমে পানির লাইন? সার্বক্ষনিক ইলেকট্রিসিটি আর ইন্টারনেট? গরম পানি? অ্যাটলিস্ট এটুকু তো থাকবে?
আমি ও আমরা আজ যা যা কিছুতে অভ্যস্ত তা কি ওখানে পাওয়া যাবে? .প্রশ্নগুলোর উত্তর যদি না হয়, তাহলে আমরা কি এসবটুকু উপেক্ষা করে এমন অঞ্চলে থাকতে রাজি হবো?
আমরা-ইসলামকে ভালোবাসার দাবি করা, এই আমরা–কি শরীয়াহর ছায়াতলে থাকার জন্য, আগামী দিনের পরাশক্তিকে শূণ্য থেকে তিলে তিলে নির্মানের লক্ষ্যে এই ‘সুবিশাল’ কুরবানী করতে পারবো?
আমরা কি সমৃদ্ধ দামাস্কাস, বাগদাদ আর ইস্তাম্বুলের দিনগুলোতে যাবার আগে মদীনার দারিদ্র্য ও যুদ্ধপীড়িত দিনগুলোকে মেনে নিতে পারবো?
নাকি রেমিডেড সুপারস্টেইট হবার অলীক স্বপ্ন বুকে পুষে, মধ্যম আয়ের দেশ থেকে উন্নত বিশ্বে পাড়ি জমানোর হিসেব কষবো?
মাঝেমাঝে মনে হয় যুদ্ধ-শান্তি-মানবতা-অধিকার-উগ্রতা-রক্তপাতের আলাপগুলো আসলে মূল সমস্যা না। এগুলো এক ধরণের স্মোকস্ক্রিন। মূল আপত্তির জায়গা হল মন আর শরীরের চাহিদা দ্বারা চালিত হওয়া জীবনযাত্রা-নাফসানিয়্যাত।
আমরা সবাই ঘুরেফিরে মডার্নিটির দাস।
3KMohammad Hossain, Syed Ishaq Hossain and 3K others15 Comments433 SharesLikeCommentShare