আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি খুব সীমিত একটা টাইমফ্রেইমের মধ্যে কাজ করে। সীমিত দৃষ্টিভঙ্গি সীমিত করে দেয় আমাদের চিন্তাকেও। দুই-তিনশো বছরের সভ্যতাকে আমাদের কাছে মনে হয় চিরন্তন, অপ্রতিরোধ্য। অ্যামেরিকা, ন্যাটো কিংবা ইস্রায়েলের সামরিক শক্তিকে আমাদের কাছে অজেয় মনে হয়। কিন্তু এর কোন কিছুই চিরন্তন না, অজেয় না। নমরুদ, ফিরআউন, ‘আদ, সামূদের অতিকায় সভ্যতাও এক সময় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে, নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে ইতিহাসের পাতা থেকে। দিগ্বিজয়ী অ্যালেক্স্যান্ডারের বিশাল সাম্রাজ্য তার মৃত্যুর পর মাত্র একটি শতাব্দীও টিকে থাকেনি। মধ্য আর উত্তর এশিয়ার বিস্তীর্ণ স্তেপ ভূমি থেকে পঙ্গপালের মতো ধেয়ে আসা একদা অপ্রতিরোধ্য মঙ্গোল বাহিনী হালাকু খানের মৃত্যুর একশো বছরের মধ্যে নিজ পূর্বপুরুষদের হাজার বছরের প্রকৃতি পূজার ধর্ম ত্যাগ করে দলে দলে ইসলামে প্রবেশ করেছে। পারস্য সম্রাট হরমুযান যাদেরকে মরুভূমিতে ছুটোছুটি করা লক্ষ্যহীন কুকুরের পাল বলে তাচ্ছিল্য করেছিলো, সেই আরবরাই হাজার বছরের পার্সিয়ান সাম্রাজ্যকে ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে ধ্বংস করেছেন মাত্র কয়েক বছরে। কোন ছিটেফোঁটা ছাড়া দুনিয়ার বুক থেকে বেমালুম মিলিয়ে গেছে নিযুত সদস্য বিশিষ্ট নাৎসি ওয়্যারম্যাখট (প্রতিরক্ষা বাহিনী)।
কিন্তু তাওহিদের শিক্ষা, ইসলাম আজো টিকে আছে এবং টিকে থাকবে। অ্যামেরিকার বিমান যতো উচুতেই উড়ুক না কেন সবসময় থাকবে আর-রাহমানের আরশের নিচেই। অপ্রতিরোধ্য, চিরন্তন, অজেয়, অমুখাপেক্ষী হলেন এক আল্লাহ, বাকি সবাই ধ্বংস হবে। মুসলিম হিসেবে আমাদের কাজ হল সেই রাজাধিরাজ, সেই আল্লাহর আনুগত্য করা, তাঁরই দেখানো পথে তাঁরই সন্তুষ্টির অর্জনের চেষ্টা করা।
আজো কুরআনের শিক্ষা সেই একই ক্ষমতা ধারন করে যা মরুভূমিতে নিজেদের মধ্যে অন্তহীন, অর্থহীন যুদ্ধে ব্যস্ত এক দল বেদুইনকে নেতৃত্বের আসনে বসিয়েছিল পৃথিবীর। জন্ম দিয়েছিল এক হাজার বছরের এক গৌরবোজ্জ্বল সভ্যতার। কিন্তু সেই কুরআনের শিক্ষার প্রতি মনোযোগী হবার বদলে আমরা এখনো মোহাচ্ছন্ন হয়ে আছি ফিরিঙ্গিসেন্ট্রিক মুগ্ধতায়, গোঁ ধরে অনুসরণ করে যাচ্ছি ইহুদী-খ্রিষ্টানদের তাদের গিরগিটির গর্তের গভীর থেকে আরো গভীরে।