মিডিয়া কিভাব ঘৃণা উৎপাদন করে তা নিয়ে মার্কিন সাংবাদিক ম্যাট টাইবির HATE Inc. বইয়ে চমৎকার কিছু আলোচনা আছে।

বইয়ের একটা চ্যাপ্টারে বিভিন্ন তথ্যপ্রমাণসহ লেখক দেখিয়েছেন অস্তিত্বহীন ‘উইপেনস অফ ম্যাস ডেস্ট্রাকশান’ এর গল্পকে কিভাবে সত্য হিসেবে তুলে ধরেছিল মিডিয়া। কিভাবে তথাকথিত উদারমনা এবং নিরপেক্ষ সাংবাদিকরা দাড় করিয়েছিল মধ্যপ্রাচ্যে হামলার তাত্ত্বিক জাস্টিফিকেশন।

সবচেয়ে ভয়ঙ্কর দিক হল, এ সময়টাতে মার্কিন যুদ্ধযন্ত্র এবং মিডিয়া একই সাথে কাজ করেছে। বিশেষ সোর্স’-এর মাধ্যমে পেন্টাগনের চাহিদা অনুযায়ী তৈরি করা তথ্য পৌছে গেছে সাংবাদিকদের কাছে। সেই ‘তথ্যের’ আলোকে তারপর বিশাল গালগল্প ফেঁদেছে সাংবাদিকরা। ছড়িয়েছে ভয় আর ঘৃণা। প্রস্তুত করেছে মিলিয়নের বেশি মানুষের হত্যাযজ্ঞের মঞ্চ।

শুধু মঞ্চ প্রস্তুত করে ক্ষান্ত হয়নি মিডিয়া। যুদ্ধ শুরু হবার পর নেমে গেছে সক্রিয় কুশীলবের ভূমিকায়। মার্কিন যুদ্ধ প্রচেষ্টার প্রতিটি অংশকে জাস্টিফাই করেছে এমবেডেড জার্নালিসমের নামে । সামরিকভাবে আক্রান্ত মুসলিম উম্মাহর ওপর আগ্রাসন চালিয়েছে মানসিকভাবেও।

মার্কিন সেনারা যখন মুসলিমদের ধর্ষন আর অপমান করছে, বন্দী,নির্যাতন আর হত্যা করছে–মিডিয়া তখন বারবার মুসলিমদের মাথায় ড্রিল করে ঢুকিয়ে দিচ্ছে–তোমরাই সন্ত্রাসী! তোমাদের বিশ্বাসেই সমস্যা।

নিউয মিডিয়ার পর ঠিক এই একই কাজ করেছে হলিউড। যিরো ডার্ক থার্টি, হার্ট লকার কিংবা অ্যামেরিকান স্নাইপারের মতো সিনেমায় মহিমান্বিত করা হয়েছে মার্কিনিদের চালানো ঠান্ডা মাথার, সুচারু জেনোসাইডকে। খুনে, ধর্ষক, আগ্রাসী মার্কিন বাহিনীকে হলিউড উপস্থাপন করেছে হিরো হিসেবে।

এই বিষয়গুলো অনেকেই কিছু কিছু জানেন। কিন্তু এই ডায়ানামিক যে বাংলাদেশেও কাজ করে তা বোঝার ক্ষেত্রে কেন যেন আমরা ভুল করে ফেলি।

মার্কিন মিডিয়া যা করেছে ঠিক একই কাজ করে দেশী মিডিয়া। অবশ্য আরেকটু মোটা দাগে। মিথ্যামিডিয়া ইসলামের মৌলিক বিভিন্ন দিককে উগ্রবাদ হিসেবে তুলে ধরে। ইসলামের অকাট্য বিধিবিধানকে নিয়ে এমনভাবে লেখে যেন এগুলো ভয়ঙ্কর কিছু একটা। .

  • আসসালামু আলাইকুম বলা, উগ্রতা
  • ফোন ধরে হ্যালো না বলে সালাম দেয়া, উগ্রতা
  • গান শোনা থেকে বিরত থাকা, উগ্রতা
  • সমাজ ও পরিবারে ইসলামের দাওয়াহ করা, উগ্রতা
  • নারীদের পর্দা করতে বলা, উগ্রতা
  • পুরুষকে দাড়ি রাখতে বলা, উগ্রতা
  • পাহাড়ে ইসলামের দাওয়াহ দেয়া, সন্ত্রাস!
  • শরীয়াহ শাসন কামনা করা, সন্ত্রাস
  • শরীয়াহর হুদুদ বা দণ্ডবিধি সমর্থন করা, সন্ত্রাস!

'সম্প্রীতি বাংলাদেশ' নামের প্রতিষ্ঠান সামান্য একটা লিস্ট করে কালারড হয়েছিল। অথচ সম্প্রীতি বাংলাদেশ লিস্ট করে যা পাবলিশ করেছে, বাংলাদেশের মিডিয়া তা করে আসছে দশকের পর দশক। কিন্তু সম্প্রীতি বাংলাদেশে জবাবদিধি করতে হলেও মিথ্যামিডিয়াকে কোন জবাবদিহি করতে হয়নি কোনদিন।

...নিরস্ত্র মানুষের ওপর অস্ত্রসহ ঝাঁপিয়ে পড়া হয়। মিথ্যামিডিয়া অস্ত্রধারীকে মহিনাম্বিত করে আর আক্রান্তকে তুলে ধরে দৈত্যদানো রূপে। মানুষের লাশ পড়ার পর হিসেবটাও গুম হয়ে যায়। লাশের হিসেবে কষতে গিয়ে বন্দী হয় মানবাধিকার কর্মী। কিন্তু মিথ্যামিডিয়া আলাপ করে গাছ নিয়ে। কারণ আক্রান্ত ব্যক্তির পরনে সাদা পাঞ্জাবী। মুখে দাড়ি, মাথায় টুপি।।

মোদীর মতো একটা ক্রিমিনালের পক্ষে কলিজা টেনে ছিড়ে ফেলার হুমকি দেয়া হয়। ফায়ার করা হয় মাসজিদের ভেতর ঢুকে। লাশ পড়ে প্রায় দু ডজন। মিথ্যামিডিয়া তখন আক্রান্তের বিরুদ্ধে তাণ্ডবের গল্প সাজায়। কালচাড়াল শুয়োরের পাল বিবৃতি দিয়ে আরো লাশের জন্য আরতি করে।

বাংলাদেশের মিথ্যামিডিয়া এবং কালচাড়াল এলিটরা খুব হিসেব করে ইসলাম ও ইসলাম পালনে সচেষ্ট মুসলিমদের বিরুদ্ধে ঘৃণা তৈরি করে। ঘৃণার স্বাভাবিকীকরণ করে ইসলামের বিধিবিধানের বিরুদ্ধে। ইসলামী ঘরানার যে কারো বিরুদ্ধে হামলা-মামলা, গুম, খুনের ক্ষেত্রে প্রস্তুত করে। বৈধতা তৈরি করে যুলুমের। অনেক সময় সক্রিয়ভাবে এই আগ্রাসনের বয়ান নির্মান করে।

এই গোষ্ঠী শুধু ইসলাম এবং ইসলাম পালনে সচেষ্ট মুসলিমদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে তীব্র বিদ্বেষই পোষণ করে না, বরং তারা এই বিদ্বেষ প্রচার করে এবং এই বিদ্বেষের সহিংস বাস্তবায়নের ক্ষেত্র তৈরি করে। আর এ নিয়ে সেক্যুলার বুদ্ধিজীবি, মানবাধিকার কর্মী, কিংবা ফেইসবুক ইনফ্লুয়েন্সাররা কথা বলবে না। যদিও বলে, হাতেগোণা দু-একজন। কারণ তারা নিজেরাও এই শ্রেনীর অংশ। ঘৃণা উৎপাদনে সক্রিয় অংশগ্রহণ যদি কেউ না-ও করে তবুও সে আলটিমেটলি এই প্রকল্পকে সমর্থন করে।

আওয়ামী-বিএনপি, ভারত-চীন রাজনীতির চেয়ে এই বাস্তবতা বোঝা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বাস্তবতাকে বোঝা ছাড়া সমস্যার সমাধান করা যায় না।