১৯২৪ সালে নেভাডা রাজ্যে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার বিকল্প পদ্ধতি খোঁজা হচ্ছিল। কারন পদ্ধতি হিসেবে ইলেক্ট্রিক চেয়ার খুব একটা মানবিক না। একে চরম ধরমের নিষ্ঠুরতা বলাটাও ভুল হবে না। বিকল্প ঠিক করা হল – গ্যাস চেইম্বারকে। বিষাক্ত গ্যাস প্রয়োগের মাধ্যমে মৃত্যুদন্ড কার্যকর হবে। এই মানবিক পদ্ধতি প্রথম প্রয়োগ করার চেষ্টা করা হয় আসামী জি জনের উপর। জন ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় কারাকতৃপক্ষ তার সেলে সায়ানাইড গ্যাস পাম্প করার চেষ্টা করে। কিন্তু দেখা গেল এভাবে কারো মৃত্যু নিশ্চিত করা অসম্ভব কারন, সেলে পাম্প করা গ্যাস বিভিন্ন ফাকফোঁকর দিয়ে লিক হয়ে যাচ্ছিল। ফলশ্রুতিতে তৈরি করা হয় গ্যাস চেইম্বার।

গ্যাস চেইম্বারের মাধ্যমে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার পদ্ধতিটা বেশ সাজানো গোছানো। এয়ার টাইট চেইম্বারের ভেতরে বন্দীকে একটি চেয়ারের সাথে স্ট্র্যাপ দিয়ে শক্তভাবে আটকানো হবে। চেয়ারের নিচে থাকে সালফিউরিক অ্যাসিড ভর্তি একটা বালতি। বন্দীর বুকের সাথে একটা লম্বা স্টেথোস্কোপ লাগানো থাকে, যাতে করে বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা ডাক্তার মৃত্যুর সময় ঘোষণা করতে পারে।

চেইম্বার থেকে বন্দী ছাড়া বাকি সবাই বের হয়ে যাবার পর রুমকে সিল করা হয়। ওয়ার্ডের সিগনালের সাথে সাথে জল্লাদ একটা সুইচে চাপ দেয়। সাথে সাথে সোডিয়াম সায়ানাইডের দুটো টুকরোকে সালফিউরিক অ্যাসিড ভর্তি বালতির মধ্যে ছেড়ে দেওয়া হয়। এর ফলে রাসায়নিক বিক্রিয়া শুরু হয় এবং হাইড্রোজেন সায়ানাইড গ্যাস বের হওয়া শুরু করে।

মৃত্যুর ব্যাপারটা ত্বরান্বিত করার জন্য বন্দীদের বড় ও গভীরভাবে শ্বাস নিতে বলা হলেও, অধিকাংশ বন্দী দম বন্ধ রাখার চেষ্টা করে। কেউ কেউ চেয়ার থেকে নিজেকে ছাড়ানোর ব্যর্থ চেষ্টা করে। গ্যাস বন্দীর শরীরের প্রবেশ করা শুরু করার সাথে সাথে তারা জ্ঞান হারায় না। কিছু সময় প্রচন্ড ভয়, ব্যাথা এবং তীব্র শ্বাসকষ্টের মধ্যে দিয়ে তাদেরকে যেতে হয়। চোখ কোটর থেকে বেড়িয়ে আসে। চামড়া নীল হতে শুরু করে। আর বন্দীর মুখ থেকে লালা ঝড়তে থাকে।

স্বাভাবিক। মানবিক হবার কিছু হ্যাপা তো থাকবেই।

১৯৬০ সালে ক্যারিল চেসম্যান নামের এক বন্দী গ্যাস চেইম্বারে ঢোকার আগে সাংবাদিকদের জানায় যদি ব্যাথা লাগে তাহলে সে তার মাথা নাড়াবে। যাতে করে বাইরে থেকে সাংবাদিকরা বুঝতে পারে। সেদিন যারা ছিলেন তারা বলেন মারা যাবার আগে বেশ কয়েক মিনিট চেসম্যান মাথা নাড়িয়েছিল।

ডাক্তারদের মতে এই সময়টাতে বন্দী তীব্র ব্যাথা ও ভয়ের মধ্য দিয়ে যায়। অনুভূতিটা হার্ট অ্যাটাক হবার ব্যাথার মতো। কারন মূল এই ক্ষেত্রেও আস্তে আস্তে হৃদপিন্ডে অক্সিযেনের সাপ্লাই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। বন্দীর মৃত্যু হয় মস্তিস্কে অক্সিযেনের অভাবের কারনে।

চেইম্বার থেকে সবটুকু বিষাক্ত গ্যাস বের করে নেওয়ার জন্য, মৃত্যুর পর একটা এক্সযস্ট ফ্যান চালিয়ে দেওয়া হয়। মৃতদেহের উপর অ্যামোনিয়া স্প্রে করা হয় যাতে করে সায়ানাইডের কোন ট্রেইস অ্যামাউন্ট থেকে থাকলে সেটা নিউট্রালাইযড হয়। মোটামুটি আধা ঘন্টা পর গ্যাস মাস্ক এবং রাবার গ্লাভস পড়ে আর্দালিরা ভেতরে ঢোকে। তারা ভেতরে ঢুকে বন্দীর চুল এলেমেলো করে দেয় যাতে করে চুলে কোন সায়ানাইড গ্যাস আটকে থাকলে সেটা বের হয়ে যায়।

ক্যালিফোর্নিয়ার এক কোর্টের রায়ে পদ্ধতি হিসেবে গ্যাস চেইম্বারকে “নিষ্ঠুর এবং অস্বাভাবিক“ বলা হলেও, বর্তমানে অ্যামেরিকার ৫ টি রাজ্যে মৃতুদন্ড কার্যকর করার এই মানবিক পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।

তবে ইসলামী শরীয়াহ অ্যামেরিকা ও পশ্চিমাদের কাছে অমানবিক, বর্বর কারন শারীয়াহতে শিরচ্ছেদের মাধ্যমে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার কথা বলা হয়েছে। ম্যাকডোনাল্ডস, কেএফসি, বার্গার কিং, পিৎযা হাটের দেশের মানুষদের কাছে ইসলামী শরীয়াহ বর্বর কারন ঈদ উল আজহায় ধারালো ছুরির মাধ্যমে গরু-ছাগল ইত্যাদি জবাই করা হয়।