হুদাইবিয়ার সন্ধি। দফায় দফায় আলোচনার পর শেষমেশ সন্ধির ব্যাপারে ঐক্যমতে পৌছানো গেছে। মুসলিমদের পক্ষ থেকে চুক্তি করছেন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম), ক্বুরাইশের পক্ষ সন্ধিতে সাক্ষর করছে সূহায়ল ইবন আমর।
মুসলিমদের পক্ষ থেকে সাক্ষী হিসেবে আছেন আবু বাকর আস-সিদ্দিক, উমার ইবনুল খাত্তাব, আবদুর রাহমান ইবন আওফ, আব্দুল্লাহ ইবন সূহায়ল ইবন আমর এবং সা’দ ইবন আবূ ওয়াক্কাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম ওয়া আজমাইন।
ক্বুরাইশদের পক্ষ থেকে সাক্ষী, মাহমূদ ইবন মাসলামা এবং মুকরিয ইবন হাফস। চুক্তিপত্রটি লিখছেন আলি ইবন আবু তালিব রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু।
চুক্তিপত্র লেখার সময় সূহায়ল ইবন আমরের পুত্র আবু জান্দাল (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সামনে এসে উপস্থিত হল। এসময় আবু জান্দাল (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) এর পায়ে ছিল লোহার বেড়ি।
ক্বুরাইশ ইসলাম গ্রহণের অপরাধে তাকে বন্দী করে রেখেছিল।
আজো এই একই “অপরাধে” লোহার বেড়ি পরিয়ে রাখা হচ্ছে অনেককে। শাসকদের কাছে আজো অপরাধের সংজ্ঞা বদলায় নি।
রাগে কাঁপতে কাঁপতে সূহায়ল আবু জান্দাল (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) এর জামা টেনে ধরলেন। বললেন –
“হে মুহাম্মাদ! এর আগমনের পূর্বেই আপনার ও আমার সন্ধিশর্ত চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে।“
হুদাইবিয়ার সন্ধির একটি শর্ত ছিল “ক্বুরাইশের কোন লোক অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া মুসলিমদের নিকট আসলে, মুসলিমরা তাকে ফেরত পাঠাবে। কিন্তু মুসলিমদের কেউ ক্বুরাইশের কাছে চলে আসলে তারা তাকে ফেরত দেবে না।“
সূহায়ল এই শর্তের ভিত্তিতে আবু জান্দাল (রাদ্বিয়ালাহু আনহু) কে ফেরত নিয়ে যেতে চাইলো। যদিও চুক্তি তখনো সাক্ষরিত হয় নি। তার দাবি মানা না হলে সে আলোচনা বাতিল করে দেয়ার হুমকি দিল। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) — সূহায়লের দাবি মেনে নিলেন।
সূহায়ল লোহার বেড়ি পরা আবু জান্দাল (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)কে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। আবু জান্দাল রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ফরিয়াদ করছেন।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন —
হে আবু জান্দাল! ধৈর্য ধারণ কর আর সাওয়াবের আশা পোষণ কর। কারন আল্লাহ্ তোমার জন্য তোমার অন্যান্য দুর্বল সঙ্গীদের মুক্তির ব্যবস্থা করে দেবেন।“
সাহাবারা সবাই স্তব্ধ হয়ে দেখছেন। উমার ইবনুল খাত্তাব (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) ছুটে গিয়ে আবু জান্দাল (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) এর পাশপাশি হাঁটতে শুরু করলেন। উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) এর কোমরে ছিলো তলোয়ার। তিনি তার তলোয়ারের দিকে ইঙ্গিত করছিলেন আর আবু জান্দালকে বলছিলেন —
“এরাতো মুশরিক, এদের রক্ত কুকুরের রক্ত।“ [মুসনাদ আহমাদ ও বায়হাকী]
“উমার রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু এ ঘটনার ব্যাপারে বলেছিলেন, আমি আশা করছিলাম আবু জান্দাল আমার তলোয়ার নিয়ে তার পিতার গর্দানে মারবেন। (যাতে করে আবু জান্দাল পালিয়ে যেতে পারেন, এবং চুক্তিও ভঙ্গ না হয়)।
আবু জান্দাল পিতার প্রতি দুর্বলতা প্রকাশ করেন তা চুক্তিটি কার্যকর হয়ে যায়।”
[সূত্রঃ ইবন কাসীর, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, খন্ড ৪, পৃষ্ঠা ৩১৫,৩১৬]