মিডিয়ার ব্যাপারে মানুষের মধ্যে বিভিন্ন ধরণের কগনিটিভ বায়াস কাজ করে। এমন এক বায়াসের কথা বিখ্যাত মার্কিন লেখক এবং ফিল্মমেইকার মাইকেল ক্রাইটন খুব চমৎকারভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। ক্রাইটন এর নাম দিয়েছেন ‘গেল মেন অ্যামনিশিয়া ইফেক্ট’ (Gell Mann Amnesia Effect)।

আপনার যদি কোন বিষয়ে ভালো জ্ঞান থাকে, তাহলে দেখবেন ঐ বিষয়ে করা অধিকাংশ মিডিয়া রিপোর্টগুলো হয় ভুলে ভরা। কোন বিখ্যাত ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে করা মিডিয়া প্রতিবেদনের ক্ষেত্রেও এব্যাপারটা ঘটে। এসব ক্ষেত্রে মিডিয়া খুব আত্মবিশ্বাসের সাথে বিভ্রান্তিকর বিভিন্ন তথ্য কিংবা পুরোপুরি ভুল কথাবার্তা প্রচার করে।

সব মানুষ সব সময় এ বিষয়টা ধরতে পারে না। পারার কথাও না। ধরুন, আইটি বিষয়ক কোন রিপোর্টে যাবতীয় ভুলভাল তথ্য দেয়া হয়েছে। এই তথ্যগুলো যে ভুল সেটা অধিকাংশ মানুষ ধরতে পারবে না। শুধু আইটি সেক্টরের ব্যাপারে যারা মোটামুটি ধারণা রাখে তারা পারবে। একারণে মিডিয়ার ‘হাতুড়ে রিপোর্টিং’ মোটামুটি অবাধে চলতে পারে।

মজার ব্যাপার হল, একটা বিষয়ে মিডিয়ার অনির্ভরযোগ্য কিংবা সরাসরি ভুল তথ্য দিচ্ছে এটা দেখার পরও আমরা অন্য বিষয়ের মিডিয়ার রিপোর্টিংকে সত্য হিসেবে গ্রহণ করি। আমি দেখছি আইটি নিয়ে পত্রিকায় হাস্যকর রকমের ভুলে ভরা একটা প্রতিবেদন করা হয়েছে। আমি সেই রিপোর্টের ভুলভ্রান্তি নিয়ে বন্ধুদের সাথে হাসাহাসিও করছি। কিন্তু পৃষ্ঠা উল্টে ‘আন্তর্জাতিক’ কিংবা ‘জাতীয়’ পাতায় যাওয়া মাত্র আমি ব্যাপারটা বেমালুম ভুলে বসে আছি। এখন আমি ধরে নিচ্ছি মিডিয়া আমার চেনাজানা বিষয়ে ঠিকঠাক রিপোর্ট না করলেও, বিশ্ব রাজনীতি, আন্তর্জাতিক কোন সংঘাতের ব্যাপারে একদম ঠিকঠাক তথ্য দিচ্ছে। এই যে বেমালুম ভুলে যাওয়া, এটাই গেলমেন অ্যামনিশিয়া।

বাংলাদেশে কি গেল মেন অ্যামনিশিয়া ইফেক্টের উদাহরণ চিন্তা করা যায়? বিভিন্ন রাজনৈতিক মামলার যারা শিকার হয়েছেন, তারা জানেন এ ধরণের মামলাগুলোর অভিযোগগুলো আসলে কতোটা নির্ভরযোগ্য।

স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব ছাত্রছাত্রী নিরাপদ সড়ক, কোটা আন্দোলন, বেতন কমানো কিংবা অন্যান্য ইস্যুতে আন্দোলনে অংশ নিয়েছে, সেগুলোর অভিজ্ঞতার সুবাদে তারা জানে পত্রিকায় পাতায় কিভাবে আগ্রাসী আর আক্রান্তের পরিচয় বদলে দেয়া হয়।

এমন যে কোন সেলিব্রিটি যাকে নিয়ে মুখরোচক গুজব রটানো হয়েছে, সে জানে সাধারণ তথ্যকে মিডিয়া কিভাবে মিথ্যে মিশিয়ে সেনসেশানালাইয করে।

বাংলাদেশের যেসব ইসলামী নেতা এবং কর্মী জেলযুলুমের শিকার হয়েছে তারা জানেন কিভাবে মিথ্যে অভিযোগ সাজানো হয়। একদম নিরীহ কোন বিষয়ে মহা অপরাধ হিসেবে ফ্রেইম করা হয়।

কিন্তু তারপরও মিডিয়াতে যখন কাউকে ‘দেশবিরোধী’, ‘চেতনাবিরোধী’, ‘পাকিস্তানের এজেন্ট’, ‘উগ্রবাদী’, ‘জঙ্গি’, ‘তান্ডবকারী’ কিংবা অন্য কোন নামে আখ্যায়িত করে বিশাল কেচ্ছা ফাঁদা হয় তখন সেই গল্প যতো হাস্যকরই হোক না কেন মানুষ সেটা বিশ্বাস করে ফেলে আমার বিরুদ্ধে বলা মিথ্যাটা আমি ধরতে পারি, কিন্তু আমি অন্যের বিরুদ্ধে বলা মিথ্যা আমি বিশ্বাস করি। গেল মেন অ্যামনিশিয়া ইফেক্ট।

মজার না ব্যাপারটা?