কখনো লাশ গোসল করিয়েছেন? অধিকাংশ ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতাটা সুখকর কিছু না। আমরা সাধারণ মৃতদের সম্মানিত করার একটা চেষ্টা করি। মৃত মানুষদের স্মৃতিকে পবিত্র একটা রূপ দেয়ার চেষ্টা করি। যদি মৃত ব্যাক্তি বিখ্যাত কোন ব্যাক্তি বা নেতাগোছের কেউ হয় তাহলে তো আর কথাই নেই। কিন্তু আমি মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে বলতে পারি সবচেয়ে বজ্রকন্ঠের ডাকসাইটে নেতার নিষ্প্রাণ দেহকে গোসল করানোর দৃশ্যও যদি আপনি দেখেন তাহলে আপনার মধ্যে কোন পবিত্র অনুভূতি হবে না। করুণা হবে। বড়জোর নিষ্প্রাণ দেহটাকে অপরিচিত মানুষদের হাতে নাড়াচাড়া হতে দেখে মায়া লাগতে পারে।

মৃত মানুষকে গোসল করানোর একটা আবশ্যক অংশ হল লাশকে বসিয়ে এবং পাশ ফিরিয়ে আস্তে আস্তে পেটে চাপ দিয়ে পেটের ভেতরে থেকে যাওয়া বর্জ্য বের করে দেয়া। এতো গেল বেইসিক। নিয়মিত লাশ গোসল করানো মানুষদের কাছে শুনতে পাবেন আরো অনেক ধরনের তথ্য। লিভার বা পাকস্থলীর অসুখ নিয়ে মারা যাওয়া, কিংবা পেটে অপারেশান করা মানুষদের লাশ গোসল করানোর সময় পেট থেকে বেরিয়ে আসে পুঁজ, লিভারের খণ্ডবিখণ্ড গলিত অংশ আর রক্ত। সাথে প্রচণ্ড দুর্গন্ধ। সবচেয়ে মহান রাজনৈতিক নেতা থেকে সবচেয়ে জনপ্রিয় সেলেব্রিটিকে এ অবস্থায় কল্পনা করুন। এখানে কি সম্মানজনক কিছু আছে?

আমরা মানুষরা অনেক ভাব ধরি। নিজেদের অনেক বড় কিছু, অনেক গুরুত্বপূর্ণ কিছু, পুতঃপবিত্র কিছু হিসেবে উপস্থাপন করতে চাই। আমরা নিজেদের চারপাশে একটা খোলস তৈরি করে নেই। কিন্তু মৃত্যু তিলে তিলে গড়ে তোলা এ খোলসকে ধ্বংস করে দেয়। আমরা একটা খেলাঘর তৈরি করি। কিন্তু মৃত্যু এসব কিছু, সব সাজসজ্জা, সব অলংকার, সব আরোপিত আবরনকে সরিয়ে উন্মুক্ত করে দেয়।

সম্মানজনক জীবনের কথা আমরা খুব চিন্তা করি, কিন্তু সম্মানজনক মৃত্যু নিয়ে কি আমরা ভাবি?

মানবজাতির অধিকাংশের মৃত্যুর মাঝেই সম্মানজনক কিছু নেই। ব্যাতিক্রম তারাই যাদের সম্মানিত করেছেন সমগ্র সৃষ্টির একচ্ছত্র অধিপতি, আল্লাহ সুবহানহু ওয়া তা’আলা। মানুষের দেয়া সম্মানের মূল্য দেহ শীতল হবার আগ পর্যন্তই। কিন্তু যাকে সম্মানিত করেন মালিকুল মুলক আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা তিনিই প্রকৃত অর্থে সম্মানিত। দুঃখজনক বিষয়টা হল, আমরা মূল্যহীনের পেছনে ছুটতে ছুটতে মূল্যবানকে হারিয়ে ফেলি।