"স্রষ্টার অস্তিত্ব সংক্রান্ত প্রাথমিক জ্ঞান ও সচেনতা ফিতরাতি (innate) ও আবশ্যক। ‘এক হল দুইয়ের অর্ধেক’ বা ‘একজন ব্যক্তি একই সাথে দুই জায়গায় থাকতে পারে না’ – এমন প্রাথমিক গাণিতিক ও বাস্তবতা সংক্রান্ত জ্ঞানের চেয়েও স্রষ্টার অস্তিত্ব সংক্রান্ত জ্ঞান অন্তরসমূহে গভীরভাবে প্রোথিত।"
[মাজমু’ আল ফাতাওয়া, ২/১৫-১৬]

"আল্লাহ তাঁর বান্দাদের ফিতরাতকে বাস্তবতাকে জানার ও উপলব্ধি করার সক্ষমতাসহ সৃষ্টি করেছেন। আর যদি মানুষের মধ্যে এই সক্ষমতা না থাকতো তাহলে বাস্তবতা সম্পর্কে কোন পর্যবেক্ষন, অনুমান, সিদ্ধান্ত, বক্তব্য বা আলোচনার অস্তিত্ব থাকতো না।"
[দার আত তা’রুদ আল-আক্বল ওয়ান-নাক্বল, ৫/৬২]

"…আর মহাবিশ্বের একজন সৃজনকর্তা থাকাকে যে অস্বীকার করে, যেমন প্রকৃতিবাদীরা (naturalists), এমন ব্যক্তির সংশয়ের জবাব আরও স্পষ্ট। তার প্রতি বলা হবে –

ওহে মূর্খ! তুমি মনে কর কোন সৃজনকর্তা ছাড়া, কোন পূর্ববর্তী বস্তু ছাড়া (prior matter), শূন্য থেকে মহাবিশ্বের সমস্তকিছুর অস্তিত্বে আসা সম্ভব। তাহলে একজন সৃষ্টিকর্তার মাধ্যমে, কোন পূর্ববর্তী বস্তু ছাড়া মহাবিশ্বের অস্তিত্বে আসাকে কিভাবে তুমি অসম্ভব বল?

এতো জানা কথা যে প্রথম প্রস্তাবনাটি সাধারন বুদ্ধি-বিবেচনার অধিকতর দূরবর্তী। বরং মানুষের স্বাভাবিক বুদ্ধি-বিবেচনা অনুযায়ী, এ দুটি প্রস্তাবনার মধ্যে প্রথমটি সত্য হওয়া অসম্ভব।

আমাদের চারপাশের দৃশ্যমান জগতের ব্যাপারে যদি প্রকৃতিবাদী বলে –‘বস্তুর ভিন্ন ভিন্ন উপাদান বা অংশ বস্তুকে অস্তিত্বে আনয়ন করেছে’ - তাহলে সে একটি কর্তা (agent), নির্মাতা, পূর্ববর্তী উপকরণের সাহায্য ব্যতীত সৃষ্টির রচয়িতা সাব্যস্ত করেছে। অর্থাৎ সে বলছে জড় বস্তু নিজেই নিজেকে সৃষ্টি ও সুসংগঠিত করে।

আর যদি সে বলে, বস্তুর অস্তিত্বের পেছনে বস্তু ব্যতীত অপর কোন কর্তা, নির্মাতা, রচয়িতা সত্ত্বা বা শক্তি এখানে আছে, তাহলে সে আসলে সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বেরই সত্যায়ন করছে। অতএব যদি সে এমনটাই বলে তবে তার জন্য আবশ্যক সৃষ্টিকর্তার ব্যাপারে সাক্ষ্য দেওয়া এবং দ্বিতীয় প্রস্তাবনাকে মেনে নেওয়া।

সুতরাং যে কোন বিবেচনায় সে যেই অবস্থান গ্রহন করেছে সেটা যা থেকে সে পালানোর চেষ্টা করেছিল তার তুলনায় খারাপ। আর এই হল বাতিলের পক্ষাবলম্বনকারীদের অবস্থা। যখনই তারা সন্দেহের বশবর্তী হয়ে কোন সত্যকে অস্বীকার করে, তারা আরো তীব্র সন্দেহে পতিত হয়।"
[মাস’আলাহ হুদুত আল-‘আলাম]

শায়খ আল-ইসলাম ইবনু তাইমিয়্যাহ রাহিমাহুল্লাহ এখানে খুব সহজ কয়েকটি সত্যকে তুলে ধরছেন।

১) মহাবিশ্ব সৃষ্ট, একজন স্রষ্টা আছেন। এ বিষয়ে জ্ঞান মানুষের ফিতরাতি (innate, inherent)। প্রতিটি মানুষের মধ্যে এই উপলব্ধি বিদ্যমান।

২) আল্লাহ ‘আযযা ওয়া জাল আমাদের বাস্তবতাকে পর্যবেক্ষন করার এবং পর্যবেক্ষন থেকে সিদ্ধান্তে আসার সক্ষমতা দিয়েছেন। এবং আল্লাহ ‘আযযা ওয়া জাল বারবার আমাদের চারপাশের বাস্তবতায় তাঁর যে নিদর্শনসমূহ আছে সেগুলোর ব্যাপারে চিন্তা করতে বলেছেন। কারন এই চিন্তা ফিতরাতিভাবে একজন মানুষ অবধারিতভাবে এই উপসংহারে পৌছে দেবে যে সমস্তকিছুর একজন সৃষ্টিকর্তা আছেন।

৩) পূর্বযুগের প্রকৃতিবাদীরা এবং বর্তমানের নিউ অ্যাইথিস্ট, ম্যাটিরিয়ালিস্ট এবং বিবর্তনবাদীরা সৃষ্টিকর্তা ছাড়া, কোন পূর্ববর্তী উৎস বা বস্তু ছাড়া মহাবিশ্বের অস্তিত্ব আসার মত কস্টকল্পনাকে সত্য বলে মেনে নেয়। কিংবা নিদেনপক্ষে সম্ভাব্য মনে করে। তারা এধরনের একটি অসম্ভাব্য, অকল্পনীয় উপসংহারকে মেনে নিতে পারে, কিন্তু যা যৌক্তিক, যা intuitive, যা ফিতরাতি, যা মানবজাতির সামস্টিক অভিজ্ঞতার সাথে সম্পূর্ণভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ সেটাকে তারা মেনে নিতে পারে না? একজন সৃষ্টিকর্তা আছে স্বতঃ প্রতীয়মান (self evident) সত্যকে তারা স্বীকার করতে পারে না।

#TheToweringIntellect