বৃদ্ধের কাজ ছিল ছবি আঁকা। প্রকৃতির ছবি। নিঃসঙ্গ, নিভৃতচারী বৃদ্ধের ক্যানভাসে প্রকৃতি জীবন্ত উঠতো, গ্রামের সবাই একথা সবাই স্বীকার করতো। দূরদূরান্ত থেকে মানুষ আসতো তার আঁকা ছবি কেনার জন্য। একদিন গ্রামের এক বাসিন্দা বৃদ্ধের মুখোমুখি হল –

“আল্লাহ্‌ তোমাকে স্বচ্ছলতা দিয়েছেন। তুমি অনেক টাকা রোজগার করো। এর কিছু অংশ দিয়ে কি গ্রামের গরীবদের সাহায্য করা যায় না? কসাইকে দেখো। তোমার চেয়ে অনেক কম থাকার পরও প্রতিদিন সে গরীবদের জন্য গোশত বিলি করে। চাষিকে দেখো। গরীব আর দেনাগ্রস্থ হবার পরও সে নিয়মিত গরীবদের ঘরে গিয়ে চাল দিয়ে আসে।“

বৃদ্ধ ঠান্ডা হাসলো। কিছু বললো না। লোকটি কথা না বাড়িয়ে ফিরে গেল। গ্রামের অন্যদের বৃদ্ধের অবস্থা জানালো। “বুড়োর অনেক আছে, কিন্তু সব নিজের জন্য জমায়। কাউকে সাহায্য করে না।“

কিছুদিন পর বৃদ্ধ অসুস্থ হল। মারা গেল। গ্রামের কেউ কিপটে বুড়োকে দেখতে গেল না। নির্জনে, নীরবে বৃদ্ধ চলে গেল। কিন্তু কিছুদিন পর গ্রামের মানুষ একটা অদ্ভুত ব্যাপার লক্ষ্য করলো। কসাই আর গরিবদের গোশত দিচ্ছে না। চাষি চাল দিচ্ছে না। অথচ গরিব মানুষগুলো প্রতিদিন তাদের কাছে ভিড় করছে, আকুতি করছে। গ্রামের লোকেদের প্রশ্নের জবাবে কসাই আর চাষি বললো –

“ছবি আঁকিয়ে বুড়ো মানুষটা প্রতি মাসে আমাদের কিছু টাকা দিত। সেই টাকা দিয়ে আমার গরিবদের মাঝে গোশত আর চাল দিতাম। তিনি মারা যাবার পর আমরা আর দিতে পারছি না।”

অনেকে হয়তো আপনাকে খারাপ মনে করে, অনেকে হয়তো স্বচ্ছ পানির চেয়েও আপনাকে বিশুদ্ধ মনে করে। মানুষের ধারণা আপনার কোন লাভে আসবে না, কোন ক্ষতিও করবে না। গুরুত্বপূর্ণ হল আপনি আসলে কেমন। আল্লাহ আসল আপনাকে চেনেন, আপনার মনের কথাও জানেন – এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ।