ইব্রাহিমের (আলাইহিস সালাম) প্রশ্ন শুনে নমরুদ যেমন হতভম্ব হয়ে গিয়েছিল করোনার আক্রমনে প্রবল পরাক্রমশালী বস্তুবাদী বিশ্বব্যবস্থার সেই একই দশা। সবাই কিংকর্তব্যবিমূড়। চোখে দেখা যায় না একটা জিনিষ, জ্বর-কাশির মতো মামুলি একটা অসুস্থতা আজ পৃথিবীকে এমন একটা অবস্থায় নিয়ে এসেছে যা কয়েক সপ্তাহ আগে ছিল অকল্পনীয়। এমন সময়গুলোতে মানুষের সযত্নে গড়ে তোলা ডিলিশানগুলো সাময়িকভাবে হলেও বাতাসে মিলিয়ে যায়। মানুষ উপলব্ধি করে দুনিয়ার মালিক আসলে কে। প্রকৃত ক্ষমতা আসলে কার হাতে।

আমাদের ক্ষেত্রেও তাই হচ্ছে। সব যুক্তিতর্কের বাইরে গিয়ে আমরা আশা করছি হয়তো গরমের কারণে করোনার প্রভাব ভোঁতা হয়ে যাবে। হয়তো কোনভাবে হার্ড ইমিউনিটি চলে আসবে কিন্তু অনেক মানুষকে মরতে হবে না। হয়তো কোন এক ভাবে হঠাৎ যেভাবে এসেছিল সেভাবেই করোনা কোন এক অজানায় হারিয়ে যাবে…

মানুষ বুঝতে পারছে আল্লাহ্‌র ওপর ভরসা করা ছাড়া এই বাংলাদেশের মানুষের আসলে আর তেমন কিছু এখন করার নেই। মানুষ এখন বিশ্বাস করছে যে আল্লাহ্‌ সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী, তিনি রাজাধিরাজ, আসমান-যমীনের একচ্ছত্র অধিপতি। তাঁর জ্ঞান পরিপূর্ণ। তাঁর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। তিনি এক ও অদ্বিতীয়। অপ্রতিরোধ্য, অপ্রতিদ্বন্দ্বী। সর্বশক্তিমান। কে আছে যে তাঁর কাজে হস্তক্ষেপ করবে? আল্লাহ্‌র ফায়সালার বিরুদ্ধে আমাদের আর কিছু করার ক্ষমতা নেই। আমরা আল্লাহ্‌র রাহমাহ – তাঁর দয়া ও করুণার মুখাপেক্ষী।

একেবারে কট্টর শাহবাগী ছাড়া সবাই এখন মোটামুটি এভাবেই চিন্তা করছে। যারা অন্যসময় এভাবে চিন্তা করতো না, তারাও এখন এভাবেই ভাবছে।

কিন্তু আফসোসের বিষয়টা কী জানেন?

যখন সমাজ ও রাষ্ট্রে আল্লাহ্‌র কথা মেনে চলার কথা বলা হয়, তখন এই মানুষগুলোই বিরোধিতা করে। যখন বলা হয় আল্লাহ্‌ যে আইন দিয়েছেন সেই আইন অনুযায়ী দেশ চালাতে হবে তখন এ মানুষগুলোই সেটাকে উগ্রবাদ বলে। ধর্মনিরপেক্ষতা আর মানুষের বানানোর আইনের দোহাই দিয়ে তখন আল্লাহ্‌র আইনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। ইসলামী শরীয়াহ প্রতিষ্ঠার দাবি কে ধর্মান্ধতা বলে। বলে আজকে এই দাবি অচল, শরীয়াহ অচল।

কী অদ্ভূত!

যে আল্লাহ্‌র কাছ থেকে আমরা সাহায্য চাচ্ছি, এই শরীয়াহ কি তাঁরই নাযিল করা না? এ দুর্যোগের সময় যে আল্লাহ্‌র ওপর আমরা ভরসা করছি সেই আল্লাহ্‌ই কি বলেননি এই শরীয়াহ অনুযায়ী আমাদের জীবনের প্রতিটি অংশকে চালাতে? যে আল্লাহ্‌র রহমতের আশা আমরা করছি তিনিই তাঁর নবী ﷺ-কে এই শরীয়াহ দিয়ে পাঠাননি? যে আল্লাহ্‌র কাছে আমরা আজ দুআ করছি তিনিই কি বলেননি যে কিয়ামত পর্যন্ত ইসলামই একমাত্র দ্বীন? একমাত্র সংবিধান? একমাত্র শরীয়াহ? আমরা বিশ্বাস করি আল্লাহ্‌ আমাদের বাঁচাতে পারেন, কিন্তু আমরা এটা বিশ্বাস করতে পারি না যে আল্লাহ্‌ যে শরীয়াহ দিয়েছেন সেটা দিয়ে আমাদের দুনিয়া চলতে পারে?

তিনি কি বলেননি,

أَفَحُكْمَ الْجَاهِلِيَّةِ يَبْغُونَ ۚ وَمَنْ أَحْسَنُ مِنَ اللَّـهِ حُكْمًا لِّقَوْمٍ يُوقِنُونَ

তবে কি তারা জাহিলিয়্যাতের আইন-বিধান চায়? আর নিশ্চিত বিশ্বাসী কওমের জন্য বিধান প্রদানে আল্লাহর চেয়ে কে অধিক উত্তম? [সূরা মা’ইদা, ৫০]

তিনি কি বলেননি,

فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤْمِنُونَ حَتَّىٰ يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لَا يَجِدُوا فِي أَنفُسِهِمْ حَرَجًا مِّمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُوا تَسْلِيمًا

অতএব তোমার রবের শপথ! তারা মুমিন হবে না যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে তোমাকে বিচারক নির্ধারণ করে, তারপর তুমি যে ফয়সালা দেবে সে ব্যাপারে নিজদের অন্তরে কোন দ্বিধা অনুভব না করে এবং পূর্ণ সম্মতিতে মেনে নেয়। [সূরা আন-নিসা, ৬৫]

আমরা সবাই তো এখন ভয় পাচ্ছি, তাই না? নিজের জন্য না হলে কমসেকম নিজের পরিবারের জন্যে। দৈনন্দিন জীবনের ব্যস্ততার অজুহাতও এখন নেই। এখন কি আমাদের একটু সময় হবে আল্লাহ্কে সাক্ষী রেখে এই বোঝাপড়াটুকু করে নেয়ার? এই বিচিত্র বৈপরীত্য নিয়ে ভাবার? কেমন অদ্ভূত বিশ্বাস নিয়ে আমরা পৃথিবীর পথে হাটছি?

আমরা বিশ্বাসের দাবি করি। কিন্তু আমরা যে অবস্থায় আছি একে কি আদৌ বিশ্বাস বলা যায়? এই ঈমান নিয়েই কি অনুশোচনার সেই দিনে আমরা আল্লাহর মুখোমুখি হতে চাই?

এ কেমন ঈমান যা আল্লাহর রাহমাহ চায়, কিন্তু তাঁর শরীয়াহ চায় না?