আমার এক ক্লাসমেইট ছিল। মহা বিদ্বান। চট্টগ্রামের ভাষায় বললে কাবিল। নিজে যা বুঝেছে তাই ঠিক। আপনি যতোই তাকে বোঝানোর চেষ্টা করবেন বুঝবে না। এই প্রবণতা খুব হাই আইকিউ ট্যালেন্টেড লোকজনের মধ্যে মানা যায়। মধ্যম মানের বা মধ্যম মানের আশেপাশের লোকজনের মধ্যে মানা কঠিন। আনফুরচুনেটলি আমার সেই ক্লাসমেট এক্সসেপশানালি বুদ্ধিমান না। সে জাস্ট এক্সসেপশানালি কাবিল।

ধরুন হোমওয়ার্ক দেয়া হয়েছে। জমা দেয়ার আগে উত্তর মিলাচ্ছি। ওর সাথে উত্তর মিলছে না। খাতা খুলে দেখলাম সূত্র ভুল করেছে। এখন সূত্র যে ভুল হয়েছে, এটা ওকে বোঝানো যাবে না। যতোই বোঝানোর চেষ্টা করি, সে নিজের মতো একটা না একটা ব্যাখ্যা দিয়ে যাবেই। জোরাজুরি করলে বলে বসবে, আমার হোমওয়ার্ক আমি আমার মনমতো করবো, তোর কী সমস্যা? ভালো করতে গিয়ে আপনি অপমানিত হয়ে ফেরত আসবেন।

শেষমেশ যখন ভুল ধরা পড়বে, তখন বোকাবোকা হাসি নিয়ে দুঃখী দুঃখী চেহারা নিয়ে ক্লাসে বসে থাকবে। আপনার মায়া হবে। কিন্তু পরে আবারো এখন একই ধরনের ভুল করবে আর আপনি শুধরে দিতে যাবেন, তখন সেই একই কাহিনী। সেই একই সবজান্তা, নিশ্চিত মিসপ্লেইসড আত্মবিশ্বাস এবং তর্ক করার অসীম জযবা।

তো এই ধরনের কাবিল মানুষকে আসলে বলে বোঝানো যায় না। ধরুন সে ব্রেক নষ্ট গাড়ি নিয়ে হাইওয়েতে যাবে। আপনি বলে তাকে নিরস্ত করতে পারবেন না। কারণ সে মহাপণ্ডিত। কোন না কোন বাংলা বুঝ সে আপনাকে দিয়ে দিবে। কথা বলতে গিয়ে উলটো আপনার মেজাজ খারাপ হবে। তাকে যদি আসলেই বোঝাতে চান তাহলে একটা রিয়েলিস্টিক অপশান হল অ্যাকসিডেন্টের জন্য অপেক্ষা করা। ক্র্যাশ করার পর যদি সে বাঁচে তাহলে তখন গিয়ে বোঝাতে হবে। ধাক্কা খাওয়ার আগে সে ভালোয়ভালোয় বুঝবে না।

আমাদের দেশের শিক্ষিত, শহুরে, বুঝদার মানুষের অবস্থা আমার সেই বন্ধুর মতো। ভালোভাবে বুঝিয়ে লাভ নেই। বোঝাতে গেলে উল্টো নিজের মেজাজ গরম হবে। সে নিজে যা বুঝেছে তাই ঠিক। বুদ্ধিমানের কাজ হল মাথা ঠাণ্ডা রেখে ক্র্যাশ পর্যন্ত অপেক্ষা করা। তারপর সে নিজেই বুঝতে আসবে।

আক্বল বলে ক্র্যাশ অবধারিত, আল্লাহ্‌ হেফাযত করার মালিক।
ততোক্ষণ পর্যন্ত অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই।

প্রায় বিশ দিন আগের লেখা। আবার দিলাম।