ইসলামের কিছু দিক কি উদ্ভট (bizarre) এবং সমস্যাজনক (problematic)?

এ প্রশ্নের দুটো সম্ভাব্য উত্তর হয় - না এবং হ্যাঁ।

একটা সঠিক, একটা ভুল।

সঠিক উত্তর হল - না। ইসলামের কোন কিছুতে অণু পরিমান সমস্যা নেই। ইসলাম পরিপূর্ণভাবে নিখুত। প্রত্যেক মুসলিম একথা সহজাতভাবে জানে ও মানে। যদি ইসলামের কোন দিক কারো কাছে ‘সমস্যাজনক’ কিংবা ‘উদ্ভট’ মনে হয় তাহলে সমস্যাটা ইসলামে না, সমস্যা তার ‘মনে হওয়াতে’। তাদের এই মনে হওয়ার কারণ হল, তারা ভুল মাপকাঠিকে দিয়ে বিচার করছে। ভালোমন্দ, ঠিক-ভুল, গ্রহণযোগ্য-অগ্রহণযোগ্য, ইত্যাদির ক্ষেত্রে সে এমন কোন মাপকাঠি গ্রহণ করছে যা ভুল। আর একমাত্র সঠিক মাপকাঠি হল সমস্ত কিছুর স্রষ্টা আল্লাহ ‘আযযা ওয়া জাল এর ঠিক করে দেয়া মাপকাঠি।

ভুল উত্তর হল - "হ্যাঁ"।
যদিও এই উত্তর ভুল কিন্তু যুগে যুগে অসংখ্যা মানুষ এ ভুল উত্তরকে গ্রহণ করেছে। কাফির ও মুশরিকদের কাছে বরাবরই ইসলাম ও তাওহিদকে ‘উদ্ভট’ ও ‘সমস্যাজনক’ মনে হয়েছে। নূহ আলাইহিস সালাম যখন মানুষকে ইসলামের দিকে আহ্বান করছিলেন তখন তাঁর গোত্রের লোকজন তাঁকে নিয়ে ঠাট্টাতামাশা করেছিল। বাঁধা দিয়েছিল, তাঁর বিরুদ্ধে চক্রান্ত করেছিল। একইরকম ঘটনা ঘটেছিল, হুদ, সালিহ, শুয়াইব, লূতসহ আরো অনেকের সাথে আলাইহিমুস সালাম। নমরুদের কাছে ইব্রাহিমের কথা, ফিরাউনের কাছে মুসার কথা, রোমান শাসক আর র‍্যাবাইদের কাছে ঈসার কথা উদ্ভট ঠেকেছিল, আলাইহিমুস সালাম। রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন আরবের বিভিন্ন গোত্রকে ইসলামের দিকে আহ্বান করছিলেন তখন বানু শায়বানের এক গোত্রপ্রধান বলেছিল, ‘আপনি যে মতামত প্রচার করছেন তার অনুসারীরা নিশ্চয়ই রাজাবাদশাদের ক্রোধের কারণ হবে’। যুগে যুগে জাহিলিয়্যাতের অনুসারীদের কাছে ইসলামকে ‘সমস্যাজনক’ মনে হয়েছে। আর তাই ইসলামের আহ্বানকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ-সম্পদ তারা ব্যয় করেছে এবং আজো করছে।

একইভাবে ইসলামের বিধিবিধান ‘উদ্ভট’ মনে হয়েছে বলেই জাহিলিয়্যাহর অনুসারীরা এর বিপরীতে বিভিন্ন অসুস্থ আচারআচরণকে গ্রহণ করেছে। আদি জাহিলিয়্যাহ অনেকের কাছে সুদ অবৈধ হওয়া, দৃষ্টি অবনত রাখা, পর্দা পালন করা, যিনা থেকে বিরত থাকার বিধানগুলোকে ‘উদ্ভট’ মনে হয়েছে। নব্য জাহিলিয়্যাহর অনেকের একইরকম মনে হয়ে। সব দেবদেবীকে বাদ দিয়ে শুধু একজনকে ইলাহ মানতে হবে, এটা কুরাইশের কাছে ‘উদ্ভট’ মনে হয়েছিল। সব তন্ত্রমন্ত্র বাদ দিয়ে এক আল্লাহর আইন মানতে হবে এটাও নব্য জাহিলিয়্যাহর মানুষের কাছে ‘উদ্ভট’ মনে হয়। ইসলাম মানুষসহ সব সৃষ্টিকে সংজ্ঞায়িত করে আল্লাহর গোলাম হিসেবে। আধুনিক সভ্যতা মানুষের ওপর দেবত্ব আরোপ করে। এমন অনেক উদাহরণ দেয়া যায়। অন্ধকারের জীবদের জন্য আলো সবসময়ই অসহনীয়। কাজেই ঐতিহাসিকভাবে মানবজাতির বিশাল একটা অংশের কাছে ইসলামকে ‘উদ্ভট’ এবং ‘সমস্যাজনক’ মনে হয়েছে, এবং হবে, এটা বাস্তবতা।

একটা হল ইসলামের অবস্থান। আরেকটা হল জাহিলিয়্যাহর অবস্থান। এ দুটো অবস্থান বিপরীতমুখী। জাহিলিয়্যাহ ইসলামকে বদলে দিতে চায়। রাসূলুল্লাহ ﷺ কে এক মাস আল্লাহর ইবাদত আর আরেক মাস কুরাইশদের মূর্তিগুলোর ইবাদত মেনে নেয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। এমন জগাখিচুড়ি প্রস্তাব নব্য জাহিলিয়্যাহর অনুসারীরাও দেয়। তারা বিশুদ্ধ তাওহিদকে কলুষিত তাদের নিজ বিশ্বাসের কাছাকাছি কিছু একটাতে পরিণত করতে চায়। অন্যদিকে ইসলাম চায় জাহিলিয়্যাহকে উপড়ে ফেলে সমস্ত পৃথিবীতে আল্লাহর দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত করতে। এ দুই অবস্থানের মধ্যে কোন আপস, কোন মিশ্রণ, কোন ছাড় সম্ভব। সংঘাত অবশ্যাম্ভাবী।

এই অবশ্যাম্ভাবী সংঘাতের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে মানুষের সামনে দুটো করণীয় থাকে।

এক. ইসলামের পক্ষে অবস্থান নেয়া। জাহিলিয়্যাহকে নিশ্চিহ্ন করে আল্লাহর দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য কাজ করা।

দুই. জাহিলিয়্যাহর পক্ষে অবস্থান নেয়া। ইসলামকে বিকৃত করার মাধ্যমে জাহিলিয়্যাহর (সেটা ব্যাবলনিয় বা ফিরাউনী সভ্যতা হোক কিংবা আধুনিক পশ্চিমা সভ্যতা) অধীনস্ত ও অনুগামী করা।

আপনি কোন পথ বেছে নিচ্ছেন তা থেকে বোঝা যাবে আপনার আনুগত্য কোন দিকে। জাহিলিয়্যাহর সাথে খাপ খাওয়ানোর জন্য যে ইসলামকে পরিবর্তন করার কথা বলে সে জাহিলিয়্যাহর পক্ষের লোক। যে ইসলামের লোক সে কখনো জাহিলিয়্যাহ অনুযায়ী ইসলামকে বদলাতে চাইবে না। সে জাহিলিয়্যাহকে সরাতে চাইবে। কাজেই ইসলাম পরিবর্তন করাকে ‘সংস্কার’, ‘পুনঃভাবনা’, ‘জ্ঞানতাত্ত্বিক পরিবর্তন’, যে নামেই ডাকা হোক না কেন, এতে বাস্তবতা বদলাবে না। আর যারা এমন কাজ করে, কিংবা এরদিকে আহ্বান করে তাদের যতো ডিগ্রি থাকুক, দাড়ি যতো লম্বা হোক, যতো অনুসারী থাকুক, যতো বুজুর্গী থাকুক না কেন, তারা জাহিল (জাহিলিয়্যাহর সাথে নিজেকে যুক্ত করা / belonging to jahiliyyah –অর্থে)।