ইসলাম নিয়ে পশ্চিমা আলোচনা সাধারণত দুই ধরণের মানুষ নিয়ন্ত্রণ করে। পশ্চিমা ওরিয়েন্টালিস্ট, অথবা পশ্চিমা আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত অথবা পশ্চিমা চিন্তায় দীক্ষিত মুসলিম (পশ্চিমা অধিকাংশ আলিমও এই ক্যাটাগরিতে পড়েন) । প্রথম শ্রেণীর ফোকাস থাকে “উন্নত” ও “অগ্রগামী” পশ্চিমা সভ্যতা ও চিন্তার মোকাবেলায় ইসলাম কতোটা পশ্চাৎপদ ও সেকেলে- সেই বিশ্লেষণে । দ্বিতীয় শ্রেণীর ফোকাস হল ইসলাম কতোটা আধুনিক, কতো মানবিক, পশ্চিমা সভ্যতার সাথে কতোটা সামঞ্জস্যপূর্ণ – তা প্রমাণে। প্রথম শ্রেণীর উদ্দেশ্য সমালোচনা। দ্বিতীয় শ্রেণীর উদ্দেশ্য সাফাই গাওয়া। তবে দু দলই পশ্চিমা সভ্যতা ও চিন্তার শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকার করে নেয়। পার্থক্য হল, এক দল খাঁটি পশ্চিমা, অন্যদল বিবেক-বুদ্ধি-বিবেচনা বন্ধক দেয়া জাতে উঠতে চাওয়া বাদামি চামড়ার ‘পশ্চিমা হতে চাওয়া’। একদল ওরিয়েন্টালিস্ট, আরেকদল মর্ডানিস্ট।

উনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে এবং বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে মর্ডানিস্টদের প্রচারিত ও প্রকাশিত লেখাগুলো পড়ার সময় লজ্জার সুতীক্ষ অনুভুতি এড়িয়ে যাওয়া বেশ কঠিন। এরা ছিল ইসলামের “আঙ্কল টম”, “হাউস নিগ্রো”। তাদের ধারণা ছিল ইসলামকে ডিফেন্ড করার অর্থ হল - ইসলামে এমন কোন কিছু নেই যা ইউরোপিয়ান দর্শন এবং নৈতিকতার সাথে সাংঘর্ষিক – একথা প্রমাণ করা। বলাই বাহুল্য এধরণের প্রচেষ্টার মূল ভিত্তি হল পশ্চিমা সভ্যতার সাপেক্ষে ইসলামকে সঠিক প্রমাণ করা। যার অর্থ হল অ্যায এ প্রায়োরি, আপনি পশ্চিমা সভ্যতাকে মানদন্ড এবং শ্রেষ্ঠ হিসেবে মেনে নিচ্ছেন।

পশ্চিমা মানদন্ডে ইসলামকে পাশ করাতে উদগ্রীব ইসলামের এই “রক্ষকেরা” ঘন্টার পর ঘন্টা আর দিনের পর দিন লাইব্রেরিতে কাঁটিয়ে দিতেন ইসলামের প্রশংসায় কিংবা ইসলামের পক্ষে ‘মহান পশ্চিমা দার্শনিকদের’ কোন উদ্ধৃতির খোঁজে । কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যেত, খুঁজে খুঁজে বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে যাওয়া কোন সাংবাদিকের লেখা থেকে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কিংবা মুসলিমদের ব্যাপারে সামান্য কিছু প্রশংসা বা ইতিবাচক কথা তারা বের করে এনেছেন। অন্ধভাবে, মন্ত্রমুগ্ধের মতো যে পশ্চিমা সভ্যতাকে তারা হৃদয়ের পূজামন্ডপে ভক্তিভরে বসিয়েছিলেন, তার ব্যাপারে ইসলামের যে কিছু বলার থাকতে পারে, এ সভ্যতা, এর নৈতিকতা ও আদর্শিক ভিত্তির ব্যাপারে ইসলামের দিক থেকে যে তীব্র সমালোচনা থাকতে পারে – এ কথা এই মর্ডানিস্টদের চিন্তাতে কখনোই আসতো না।

বর্তমানে এ অবস্থার কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। তীব্র হীনমন্যতার জায়গায় কিছুটা হলেও জাগ্রত হয়েছে আত্মসম্মান ও আত্মমর্যাদার বোধ। কিন্তু এখনো রয়ে গেছে মৌলিকভাবে পশ্চিম – ইউরোপিয়ান সভ্যতাকে রেফারেন্স পয়েন্ট হিসেবে নেয়ার ব্যাপারটা। মর্ডানিস্টরা আমাদের মাঝেই এখনো আছে, তবে প্রভাব-প্রতাপ ও প্রতিপত্তির দিক দিয়ে তাদের জায়গা দখল করে নিয়েছে মডারেট ইসলামিস্টরা। সমসাময়িক এই মডারেট মুসলিম লেখক, বক্তা কিংবা ইসলামপ্রচারকদের মধ্যে ইসলামের ব্যাপারে গর্ব ও মুসলিম হিসেবে আত্মমর্যাদবোধ দেখতে পাওয়া যায়। এ গর্ব ও মর্যাদাবোধ তাদের কথায় প্রকাশ পায়, এবং পশ্চিমা অবক্ষয়ের ব্যাপারেও তাদের উচ্চকন্ঠ হতে দেখা যায়। কিন্তু এতো সব উন্নতি সত্ত্বেও পশ্চিমা চিন্তার পরাধীনতা থেকে মুক্তি তাদের মেলেনি। শুধু বদলেছে চিন্তাগত পরাধীনতার ধরণ।

মডারেট ইসলামিস্ট ও সংস্কারপন্থীদের মুখে প্রায়ই ‘আন-নাহদা’, ‘পুনঃজাগরন’ কিংবা “ইসলামি রেনেসাঁ’ জাতীয় কথাগুলো আপনি শুনতে পাবেন। খোলাখুলিভাবেই তাঁরা ইউরোপিয়ান রেনেসাঁর আদলে ইসলামি রেনেসাঁর কথা বলেন। প্রত্যক্ষ কিংবা অপ্রত্যক্ষভাবে ইউরোপিয়ান রেনেসাঁকে মডেল হিসেবে গ্রহণ করেন। কিন্তু ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে, এমনকি নির্মোহ ঐতিহাসিক অবস্থান থেকে রেনেসাঁ আসলে কী? ক্রিশ্চিয়্যানিটির শক্তিশালী হবার মাধ্যমে যেই পৌত্তলিকতা (paganism – as a worldview, not just a belief system) ইউরোপের ওপর প্রভাব ও নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছিল, রেনেসাঁ হল সেই প্রকৃতিপূজারী, গ্রেকো-রোমান পৌত্তলিকতার পুনর্জন্ম। এবং বর্তমানে আমরা যে পশ্চিমা অবক্ষয় ও অধঃপতন দেখি, মডারেট ও সংস্কারপন্থি ইসলামিস্টরা যার সমালোচনা করেন, তার উৎসমূল হল পৌত্তলিক রেনেসাঁ এবং এর আদর্শ। ডানপন্থী, রক্ষণশীল পশ্চিমা ক্রিশ্চিয়ানদের (যারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ইসলামবিদ্বেষীও হয়ে থাকে) বিরোধিতা করতে গিয়ে এই মুসলিমরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি এড়িয়ে যান তা হল - দু দুটো ধর্মকে (জুডেইযম ও ক্রিশ্চিয়ানিটি) ধ্বংস করা এ শক্তি ও মতাদর্শ ইসলামের জন্যও হুমকি। বিশ্বব্যাপী সেক্যুলারিযম তথা কার্যত ধর্মহীনতার যে তান্ডব গত প্রায় এক শতাব্দী জুড়ে আমরা দেখেছি, রেনেসাঁ ও ইউরোপিয়ান এনলাইটেনমেন্ট থেকেই তা উদ্ভূত। বর্তমানের মুসলিমদের বিশাল একটি অংশ হয় এ হুমকিকে এড়িয়ে যান, অথবা তারা মনে করেন ইসলামের অন্তর্নিহিত শক্তি ও আদর্শিক দৃঢ়তার কারণে এই হুমকি গ্রাহ্য করার প্রয়োজন নেই।

ইসলাম অবক্ষয়, বিকৃতি কিংবা দূষণের উর্ধে – একথা আমরাও স্বীকার করি, বিশ্বাস করি। কিন্তু সমস্যা হল ইসলামের ক্ষেত্রে যে কথা খাটে, সে কথা মুসলিমদের ক্ষেত্রে খাটে না। কর্তৃত্বশালী সভ্যতা হওয়া সত্ত্বেও, রাষ্ট্র ও সমাজের ব্যাপক প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো ও ভিত্তি থাকা সত্ত্বেও যেখানে সেক্যুলারিযম ও এনলাইটেনমেন্টের আদর্শের প্রচন্ড আক্রমনের সামনে ইউরোপের ক্রিশ্চিয়্যানিটি টিকে থাকতে ব্যর্থ হয়েছে, সেখানে কিভাবে বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীন সামরিক, সাংস্কৃতিক ও মতাদর্শিক আক্রমনের সম্মুখীণ, দুর্বল, দুর্দশাগ্রস্থ ও বিভ্রান্ত মুসলিমদের ক্ষেত্রে ভিন্ন ফলাফল যৌক্তিকভাবে আশা করা যেতে পারে?

মডারেট ও সংস্কারপন্থি ইসলামিস্টদের মুখে আজ আমরা বারবার শুনি – আমরা পশ্চিমের কাছ থেকে ভালোটা নেবো, মন্দগুলো বাদ দেবো। একজন মুসলিমের কাছ থেকে, বিশেষ করে ইসলামের শ্রেষ্ঠত্বে বিশ্বাসী হবার দাবি রাখা ইসলামপন্থিদের কাছ থেকে এমন কথা শোনাটা বেশ অদ্ভূত। ইসলাম পরিপূর্ন। একটি সম্পূর্ণ, স্বতন্ত্র ও স্বাধীন বিশ্বদৃষ্টিভঙ্গি (worldview)। ইসলাম একটি গেশটাল্ট – Gestalt- এমন এক পরস্পরসংযুক্ত সম্পূর্ণতা যা থেকে কোন একটি এলিমেন্টকে বিচ্ছিন্ন করে, স্বতন্ত্রভাবে গ্রহণ বা বর্জনের সুযোগ নেই। ইন ফ্যাক্ট, প্রতিটি শক্তিশালী সংস্কৃতি ও সভ্যতার মধ্যে এই বৈশিষ্ট্য কোন না কোন মাত্রায় উপস্থিত থাকে। এমনকি দূর থেকে দেখে যা আমাদের কাছে ক্রমপরিবর্তনশীল, আকার, রং আর অবয়ব পাল্টাতে থাকা বায়োস্কোপের ছবির মতো মনে হয়, সেই পশ্চিমা সভ্যতার দার্শনিক ভিত্তি আর দৈনন্দিন প্রয়োগের মধ্যেও আছে সরাসরি সম্পর্ক। আছে কার্যকারণ সম্পর্কের সুক্ষ বুনন। সভ্যতার যেকোন অংশ তার পুরোটার সাথে সংযুক্ত। এক সুতো টানলে দেখতে পাবেন অসংখ্য অদৃশ্য আঁশ আর সংযুক্তির জালের মাধ্যমে বাকি অংশের সাথে তা যুক্ত। ‘ভালো’ মনে করে যে অংশবিশেষ আপনি আলাদাভাবে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন, তা আপনার ঘরে টুকরো টুকরো করে, খন্ডে খন্ডে, ধাপে ধাপে নিয়ে আসছে তার সম্পূর্ণ কাঠামো। আলোর সাথেই আসে ছায়ার আঁধার, আর প্রতিটি ‘ভালো’র সাথে আসে তার সাথে সংযুক্ত অথবা তার প্রতিক্রিয়াস্বরূপ জন্ম নেয়া প্রতিটি “মন্দ”। আগুনের আলো নিলে তার জ্বালাও নিতে হয়।

কিন্তু মডারেট ও সংস্কারপন্থিরা এ বাস্তবতাকে ভুলে থাকতে চান। মিস্টি মিস্টি কথার সাউন্ডবাইটে তারা আমাদের বোঝাতে চান পশ্চিমের কাছ থেকে আরো বেশি বেশি করে গ্রহণ না করাই, আরো সক্রিয়ভাবে পশ্চিমের অনুকরণ না করাই যেন আমাদের দুর্দশার কারণ। পরাধীনতা - সম্ভবত অনিচ্ছায় ও অজান্তেই আচ্ছন্ন করেছে তাদের চিন্তার জগতকে। আজ শব্দ, শব্দাবলী ও বাক্যের কারুকাজের আড়ালে লুকিয়ে ফেলা চেষ্টা করা হয় হৃদয়ে শক্ত শেকড় গেড়ে বসা হীনমন্যতার অনুভূতি। কিন্তু তবুও তাদের কথায় প্রকটভাবে ফুটে উঠে পশ্চিমা সভ্যতার প্রথা, প্রবণতা ও প্রভাবের প্রতি মানসিক পরাধীনতা। নানা আরবী শব্দ আর পরিভাষার আড়ালে ইসলামীকরন করা হয় পশ্চিমা ধ্যানধারণা ও চিন্তার। ওয়াহির ভিত্তিতে গড়ে ওঠা ইসলামী চিন্তা ও আধ্যাত্বিকতা থেকে বিচ্ছিন্ন এ “ইসলাম” পরিণত হয় কিছু আবেগ, অনুভূতি আর বাস্তবতাহীন বুলির পোশাকী উপস্থাপনে।

নূহ আলাইহিস সালাম –এর সময় থেকে শুরু করে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পর্যন্ত – যুগে যুগে নবীরাসূলগণ ক্ষমতাসীন এবং ক্ষমতাসীন সভ্যতা সংস্কৃতির সরাসরি বিরোধিতা করেছেন। প্রবল প্রতিকূলতার মাঝেও আপসহীনভাবে তাঁরা নিজেদের অবস্থান ধরে রেখেছেন, বিদ্যমান সভ্যতা ও সংস্কৃতির কাঠামোর বাইরে একটি স্বতন্ত্র পরিচয় ও দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলেছেন এবং প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে আদর্শিক আঘাত হেনেছেন। কিন্তু আজ ইসলামের অনেক প্রচারক এবং অনেক ইসলামপন্থি ইসলামের বিজয় দেখছেন পশ্চিমা সভ্যতার অনুকরনের মাঝে। ইসলামের আদর্শিক বিশুদ্ধতার বদলে সেক্যুলারিযম, গণতন্ত্র এবং লিবারেলিযমের মতো ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক জীবনদর্শনের ইসলামীকরনের মাঝে তারা উম্মাহর বিজয় দেখছেন। মুসলিম পরিচয় এবং মুসলিম হিসেবে অধিকারকে সংজ্ঞায়িত করছেন সেক্যুলার আইন্ডেন্টিটি পলিটিক্স এবং লিবারেল বয়ানের ভাষায়। নিজেকে তারা পশ্চিমের চোখে দেখছেন, আর ইসলামকেও ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করছেন উদারনৈতিক পশ্চিমের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে। পশ্চিমের ভাষায় তর্ক করতে গিয়ে ভাষার মারপ্যাঁচে আটকা পড়ে ছাড় দিতে বাধ্য হচ্ছে ইসলামী শরীয়াহর অনেক বিষয়েই। খিলাফাহ, শরীয়াহ শাসন, হুদুদ, বহুবিবাহ, বাল্যবিবাদ, জিহাদ থেকে শুরু করে দাড়ি-টূপি কিংবা নিক্বাব-হিজাবের মতো একেবারে ব্যক্তিগত পর্যায়ের বিষয়কেও তারা পশ্চিমা তর্কের ভাষায় ডিফেন্ড করাকেই সমীচিন মনে করছেন। ফলে পাওয়া যাচ্ছে ইসলাম আর কুফরের অদ্ভূত এক মিক্সচার। যেখানে শরীয়াহ হল কাফিরের সাথে গলাগলি করা আর কুফরকে মেনে নেয়া, নামায হল খুব ভালো এক্সারসাইয, রমযানের সিয়াম পালন হল বছরে একবার নিজের ডায়েট ঠিক করে নেয়া আর ডাইজেস্টিভ সিস্টেমের ওভারহলিং এর সুবর্ন সুযোগ! এ ইসলামে হিজাব হল ‘চয়েস’, ইসলামের নারী অধিকার হল ইতিহাসের প্রথম “ফেমিনিযমের উদাহরণ”, পরিবারে স্বামী-স্ত্রী কেউ কারো ওপর কর্তৃত্বপ্রাপ্ত না, জিহাদ হল সকালে সময়মতো উঠে অফিসে যাওয়া, আল ওয়ালা ওয়াল বারা হল ইসলামের বিরুদ্ধে সর্বাত্বকভাবে যুদ্ধে লিপ্ত রাষ্ট্রকে নিয়মিত ট্যাক্স দেয়া আর সে রাষ্ট্রের প্রতি নিজেদের গদগদ দেশপ্রেম প্রকাশ করা। আর সবার ওপরে এই ইসলামের মানে আত্মসমর্পন না, এই ইসলামের মানে শান্তি।

গত শতাব্দীর মর্ডানিস্টদের মানসিক দাসত্ব ও হীনমন্যতা তাদের বাধ্য করেছিল পশ্চিমের চোখে ইসলামকে “সভ্য” প্রমানে ব্যতিব্যস্ত হয়ে ইসলামের এমন অনেক বিধিবিধানকে অস্বীকার করতে যা পশ্চিমা সভ্যতার সাথে খাপ খায় না। আর এ শতাব্দীর মডারেট ইসলামিস্টরা পশ্চিম ও ইসলামের মৌলিক সংঘর্ষকে অস্বীকার করতে গিয়ে, কুফর ও কুফর সভ্যতার ইসলামাইযেইশান করতে গিয়ে ইসলামী শরীয়াহকে ব্যাখ্যা করছেন পশ্চিমের শেখানো ভাষায়, পশ্চিমের উপযোগী করে, আর তার করতে গিয়ে বদলে ফেলছেন ইসলামকেই।

একারনেই দেখবেন – ইসলামি সভ্যতা যখন থেকে বিজ্ঞানি ও দার্শনিক জন্ম দেয়া বন্ধ করেছে তখন থেকেই ইসলামি সভ্যতার অধঃপতন, অবক্ষয় আর পশ্চাৎপদতার শুরু – মর্ডানিস্ট বলুন, মডারেট বলুন কিংবা ট্র্যাডিশানালিস্ট - ওরিয়েন্টালিস্টদের প্রচার করা এ “থিসিস” সকলেই বিনাবাক্যব্যায়ে গ্রহণ করে নেয়। এই অনুভূতির সাথে যুক্ত হয়েছে ‘ইসলামি রেনেসাঁর’ ব্যাপারে এক উদগ্রীব, বেপরোয়া মুগ্ধতা। তারা বিস্মৃত হয়েছে যে ইসলামের দৃষ্টিকোন থেকে অধঃপতন ও অবক্ষয়ের চেয়েও বিচ্যুতি বেশি ভয়ঙ্কর। কারণ অবক্ষয় হল ক্লান্তি ও শিথিলতার উপসর্গ। অন্যদিকে বিচ্যুতি হল ভুল গন্তব্যের দিকে অসুস্থ গতিশীলতা। পাগল কিংবা ভূতগ্রস্থ দৈত্যের চেয়ে ঘুমন্ত দৈত্য উত্তম।


[চার্লস লি গাই ইটন (হাসান লি গাই ইটন/হাসান আব্দুল হাকিম) রচিত Islam and The Destiny of Man (1985) বইয়ের একটি অংশ অবলম্বনে। ]