অন্যান্য সব বিদআহ ও গোমরাহির মতো, হাদিস অস্বীকারের ফিতনাও এমন এক ছদ্মবেশে আসে যা আল্লাহর দ্বীনের প্রতি মানুষের সম্মান ও ভালোবাসাকে কাজে লাগায়। হাদিস অস্বীকারকারীদের কেউ কেউ উম্মুল মুমিনীন আইশার রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা বিয়ে ও তা কার্যকর হবার ব্যাপারে সহীহ আল বুখারিতে হাদীস অস্বীকার করে[1]। আবার কেউ সিহরের (জাদু) দ্বারা আল্লাহর রাসূলের ﷺ ক্ষতিগ্রস্ত হবার হাদিস অস্বীকার করে। আর এর দ্বারা তারা র রাসুলুল্লাহর ﷺ সম্মানের রক্ষক হবার দাবি করে। তারা এই হাদিসগুলোকে বর্জনীয় মনে করে। তাদের ধারণা এ হাদিসগুলো রাসূলুল্লাহকে ﷺ আক্রমণ করতে ইসলামবিদ্বেষীদের সুযোগ করে দেয়।

আর তারা মনে করে ইসলামবিদ্বেষীদের আক্রমন বন্ধ করার উপায় হল হাদীসের সনদ ও তাহক্বিকের (সত্যতা নির্ণয়) সম্পূর্ণ পদ্ধতি সম্পর্কে সন্দেহ তৈরি করা এবং আল্লাহর ইচ্ছায় রাসূলুল্লাহর ﷺ সুন্নাহ থেকে যে অমূল্য জ্ঞানভান্ডার উম্মাহ লাভ করেছে তা থেকে মুসলিমদের বঞ্চিত করা।

কোন বর্ননা সরাসরি রাসূলুল্লাহর ﷺ কি না, এটা নির্ধারনের ক্ষেত্রে যে সূক্ষাতিসূক্ষ পরীক্ষা ও বিশ্লেষন পদ্ধতির অনুসরণ করা হয় তার ব্যাপারে অধিকাংশ সাধারন মুসলিমই কোন ধারণা রাখে না। হাদিসের তাহক্বিকের পদ্ধতির ব্যাপারে সাধারন মুসলিমদের এ অজ্ঞতার কারনে হাদিস অস্বীকারকারীদের বক্তব্য ও আহবান অনেক সময় জোরালো রূপ ধারণ করে।

সবচেয়ে অদ্ভূত ব্যাপারটা হল হাদীস অস্বীকারকারীরা তাদের হাদীস অস্বীকারের মাধ্যমে ক্বুর’আনের ব্যাখ্যাকারী ও শিক্ষক হিসেবে রাসূলুল্লাহর ﷺ যে অবস্থান ও মর্যাদা তা অস্বীকার ও অর্থহীন প্রমান করতে চায়, আবার একই সাথে তারা এই দাবিও করতে চায় যে তারা আসলে রাসূলুল্লাহর ﷺ সম্মান রক্ষা করছে।

বর্তমান সময়ে মুসলিমদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সাম্প্রদায়িকতার এই প্রেক্ষাপটে, যেখানে ধর্মীয় বিভিন্ন সংগঠনগুলো ও ধারা একে অপরের সাথে প্রকাশ্যে তিক্তবিবাদে জড়িয়ে পড়ছে হচ্ছে সেখানে হাদিস অস্বীকারকারীগণ নিজেদের ‘উদার’, ‘অসাম্প্রদায়িক’ ও ঐক্যের ধ্বজাধারী হিসেবে উপস্থাপন করতে চায়। আর তারা দাবি করে তারা মুসলিমদের সব দল্গুলোকে একমাত্র কুরআন এর ছায়াতলে সমবেত করতে চাইছে। কারন ক্বুর’আনই একমাত্র বই যা সকল সন্দেহের ঊর্ধ্বে।

তবে বাস্তবতা হল হাদিস অস্বীকারকারীরা বাস্তবিক অর্থে উদারও না, প্রগতিশীলও না। তারা নিজীদের উদার দাবি করার মাধ্যমে বোঝাতে চায় যে মতপার্থক্যের ব্যাপারে তারা সহনশীল। কিন্তু যখন গভীর ভাবে তাদের বক্তব্য ও কাজের বিশ্লেষণ করা হয় তখন দেখা যায় যে, যারাই ক্বুর’আনের ব্যাপারে তাদের মনগড়া ব্যাখ্যা স্বীকার করে না, হাদিস অস্বীকারকারীরা তাদের কাফির, কিংবা গোমরাহ, কিংবা ইহুদি-খ্রিস্টানের দালাল ইত্যাদি আখ্যায়িত করে। (ইন শা আল্লাহ পরবর্তীতে কিছু উদাহরন দেওয়া হবে)

আর যদি প্রগতিশীলতার কথা বলা হয়, তবে প্রগতিশীলতা তো কেবল আল্লাহর দ্বীনের আলোকে অগ্রসর হওয়া, আল্লাহর দ্বীনকে পরিবর্তন করা তো প্রগতি না।

আর ক্বুর’আনের পতাকাতলে সকল ফিরকার ঐক্যসাধন করার ব্যাপারে তাদের দাবির সম্বন্ধে যদি বলতে হয় তবে, এসকল গোষ্ঠী তো ইতিমধ্যেই কুরআনের আয়াতের ব্যাপারে একমত। মুসলিম উম্মাহর মাঝে যত বাতিল ফিরকা আছে সবাই ক্বুর’আনকে স্বীকার করে। মতপার্থক্য তো আয়াতের ব্যাখ্যা নিয়ে। আর হাদিস অস্বীকারকারীদের নিজেদের মধ্যেও এধরণের মতপার্থক্য দেখা যায় ( ইন শা আল্লাহ এব্যাপারেও উদাহরণ পরবর্তীতে দেওয়া হবে)

সুতরাং তাদের এ দাবিটিও ভিত্তিহীন। হাদিস অস্বীকারাকারীদের একমাত্র “কৃতিত্ব” ও অবদান হল তারা ইসলামের নুসুস সম্পর্কে সংশয় ও সন্দেহ সৃষ্টি করেছে, ইসলামের শত্রুদের জন্য ইসলামি শরীয়াহকে আক্রমনের পথ খুলে দিয়েছে এবং দ্বীনের সুপ্রতিষ্ঠিত বিষয়সমূহকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করেছে।
আর তাই দেখতে পাবেন –সেক্যুলারিস্ট, মর্ডানিস্ট, মডারেট, “ইসলামী প্রগতিশীল” থেকে শুরু করে যারাই শাসন ও আইনপ্রনয়নের ব্যাপারে শরীয়াহর ভূমিকাকে অস্বীকার বা খাটো করে দেখাতে চায় তারা সবাই হাদিস অস্বীকারকারীদের বিভিন্ন মত গ্রহন করে, এবং নিজেদের প্রয়োজনে এসব “ব্যাখ্যাকে” ব্যবহার করে। আর এভাবে হাদিস অস্বীকারকারীদের সাথে এধরনের দলগুলোর গোমরাহি মিলে ধারাবাহিকভাবে দ্বীনের ব্যাপারে নানা অদ্ভুত ও বাতিল ব্যাখ্যার জন্ম দিতে থাকে।


[1] বর্তমানের অনেক বিখ্যাত “স্কলার, দাঈ, লেখক, ইউটিউব সেলিব্রিটির এই হাদিস অস্বীকার করে থাকেন। তাদের মধ্যে ইমরান নযর হোসেন একজন।