ঐতিহাসিকদের আলোচনায় শাবাস ইবন রিবি’ নামের এক ব্যক্তির নাম পাওয়া যায়।
অদ্ভুত এক জীবনী –

তিনি মিথ্যা নবুওয়্যাতের দাবিদার সাজা’আহ এর উপর ইমান এনেছিলেন। তার “মুয়াযযিন” ছিলেন। পরে তাওবাহ করেন।

যারা উসমানের রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল এবং তাকে হত্যা করেছিল, তিনি ছিলেন তাদের অন্তর্ভুক্ত। পরে তাওবাহ করেন।

তিনি আলির রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন। তারপর তাওবাহ করে, আলির রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বাহিনীতে যোগ দেন।

তারপর তিনি হারুরিয়্যাহ খারেজিদের সাথে যোগ দেন এবং আবারো আলির রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন। তবে পরে খাওয়ারিজের কাতার থেকে সরে আসেন।

তিনি আল-হুসাইনের রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হত্যাকারী বাহিনীর অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। পরে মন বদলান। যারা হুসাইন হত্যার প্রতিশোধের দাবি করছিল তিনি তাদের সাথে যোগ দেন।

তারপর তিনি আল-মুখতার ইবন উবাইদুল্লাহর অনুসারী হন। কিছুদিন পর তাওবাহ করে যারা আল-মুখতারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছিল, তাদের সাথে যোগ দেন।
[ইবন হাজর আল-আসকালানির “তাহযিবুল তাহযিব” থেকে]

এখান থেকে শিক্ষণীয় কী?

মানুষের ইমান নড়বড়ে হয়ে যাবার প্রধান কারণগুলোর একটি হল ফিতনা/পরীক্ষার সামনে নিজেকে উন্মুক্ত করে দেয়া। শেষ যমানার ফিতনাগুলো নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন -

আর যে নিজেকে এসব ফিতনার সামনে উন্মুক্ত করবে, তারা (ফিতনাগুলো) তাকে ধ্বংস করে দেবে। সুতরাং যে ফিতনা থেকে কোন নিরাপত্তা কিংবা হেফাযত খুঁজে পেতে সক্ষম, সে সেখানে আশ্রয় নিক। [আল-বুখারি]

মানুষ নানা রকম অজুহাত দেয়। আর মানুষ নিজেকে সব চেয়ে বেশি ভুল বোঝায়।
কেউ হয়তো বলবে –

“আমি জাস্ট জানতে চাই…”
“আমি আমার মতো ব্রাউয করছিলাম, তখনই ব্যাপারটা চোখে পড়লো।”
“আমি শুধু সবাই কী নিয়ে কথা বলছে, সেটা জানতে চাই।”
“জাস্ট আমার মতামতটা জানিয়ে দিচ্ছি। অলরেডি যেহেতু বিষয়টা নিয়ে কথা হচ্ছে, আমার মতামতটা জানাতে নিশ্চয় কোন ক্ষতি নেই।”
“আমার নিজের ওপর বিশ্বাস আছে। এসব বিষয় আমার ওপর প্রভাব ফেলে না।”

কিন্তু কিছু বুঝে ওঠার আগেই ফিতনাহ তাকে গ্রাস করবে আর তার ইমান নিঃশেষিত হতে থাকবে। আর কখনও মনে হয় ফিতনার অংশ হওয়া আজকের মতো সহজ ছিল না। সব কিছু আমাদের চোখের সামনে হচ্ছে। ইচ্ছে করলেই যেকেউ, যেকোনো বিষয়ে মন্তব্য করতে পারছে। কিন্তু যারা তাদের ইমানের ক্ষতির ভয় করেন, তারা জানেন যে, রাসূলুল্লাহর ﷺ “ফিতনাহ থেকে দূরে থাকার” উপদেশ, অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে আজ বেশি প্রযোজ্য।

অনলাইনে সহজে খুঁজে পাওয়া গুনাহ, কোন মুসলিমের চরিত্রের ব্যাপারে গুজব, ইমানকে নড়বড়ে করে দেয়া ধ্যানধারণা-চিন্তা, এমন কোন তর্কবিতর্ক যার সাথে আপনার কোন সম্পর্ক নেই; যে ব্যাপারে শরীয়াহ আপনাকে কিছু করতে বা বলতে বলেনি ইত্যাদিসহ, এধরনের সব ফিতনাহর মুখোমুখি হলে ঝুঁকি নেবেন না। চোখ-কান বন্ধ করে দৌড়ান। আপনার আখিরাতের পেছনে ছুটুন। ফিতনাহর পেছনে না।

এটাই সাফল্য, এটাই আনন্দ।
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন –
“সেই ব্যক্তি প্রকৃত সুখী যে ফিতনাহ এড়িয়ে চলে।” [আবু দাউদ]
[উস্তাদ আলি হাম্মুদার লেখা অবলম্বনে]

সোশ্যাল মিডিয়াগুলো আমাদের সামনে বিভিন্ন বিভ্রম সৃষ্টি করে। তার মধ্যে একটি হল –
এমন বিষয়কে গুরুত্বপূর্ণ মনে করা যা গুরুত্বপূর্ণ না, এমন বিষয়কে তুচ্ছ মনে করা যা আসলে গুরুত্বপূর্ণ।

অন্যটি হল নিজের চিন্তা, মতামত বিশ্লেষণ আসলে যতোটা না তার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করা।

প্রতিটি কথা, কাজ, সিদ্ধান্তের হিসেবে দিতে হবে। হিসেব দিতে হবে প্রতিটি শব্দ, অক্ষর, লাইক, শেয়ারের। কোন কিছুর পেছনে দৌড়োবার আগে, মন্তব্য করার আগে চিন্তা করুন এ ব্যাপারে আল্লাহ ‘আযযা ওয়া জাল এর সামনে জবাবদিহি করতে আপনি রাজি আছেন কি না। নিজের কথা ও কাজকে পুরস্কারের উপলক্ষ যদি বানাতে নাও পারেন, অ্যাটলিস্ট নিজের শাস্তির কারণ বানাবেন না।