বাবরি মসজিদ নিয়ে ভারতীয় আদালতের রায় বিশেষভাবে ভারতের মুসলিমদের জন্য এবং ইন জেনারেল উপমহাদেশের মুসলিমদের জন্য একটা ওয়েইক আপ কল। ভারতীয় মুসলিমদের একটা প্রবণতা আছে হিন্দুত্ববাদী ভারতের আগ্রাসনের কাছ থেকে সেক্যুলার ভারতের কাছে আশ্রয় চাওয়ার। বাংলাদেশেও আছে চেতনাৎসি শাহবাগীদের আক্রমনের মুখে জাতীয়তাবাদী সেক্যুলারদের কাছে মাথা গোঁজার ঠাই খোঁজার প্রবণতা। আবার পশ্চিমেও অনেক দিন ধরে চলছে কট্টর ডানপন্থীদের (কিংবা হালের অলট রাইট/আইডেন্টিটারিয়ান) ভয়ে বামপন্থীদের দিকে ছুটে যাবার অভ্যাস। কিন্তু বাবরি মসজিদ নিয়ে রায় আবারো চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে সেক্যুলার ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে, সেক্যুলারদের কাছে ধরণা দিয়ে মুসলিমদের স্বার্থরক্ষা ও অধিকার আদায়ের চিন্তা আসলে কতোটা হাস্যকর। যে ব্যবস্থার কাজ হল ক্রমান্বয়ে আমাকে মুছে দেয়া, তার ওপর ভরসা করে অস্তিত্ব টেকানোর দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করা অর্থহীন। এক্সারসাইয ইন ফিউটিলিটি। উন্মাদনার টেক্সটবুক উদাহরণ।

সেক্যুলার রাষ্ট্রের বাস্তবতা হল একদিকে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের মতো দলের লোকেরা মসজিদ ভাঙ্গবে, অন্যদিকে আদালতে বসা আয়েশী বাবুসাহেবেরা হাজার পৃষ্ঠার রায় লিখে সেটার বৈধতা দেবে। সেক্যুলার রাষ্ট্রের মানবতা, ধর্মের স্বাধীনতা, ইত্যাদির মতো কনসেপ্টগুলো কখনোই আপনাকে-আমাকে বাচাতে আসবে না, বরং প্রতিনিয়ত কাজ করে যাবে আপনার ও আমার পরিচয় ও বিশ্বাসকে মুছে দেয়ার প্রচেষ্টার বৈধতা ও তাত্ত্বিক কাঠামো নির্মানে। এ রাষ্ট্রব্যবস্থা, এ কাঠামো কখনো ইসলাম ও মুসলিমদের পক্ষে দাঁড়াবে না। এটা তাদের মৌলিক উদ্দেশ্য ও বৈশিষ্ট্যের সাথে সাংঘর্ষিক। বোরকা ব্যান থেকে শুরু করে বাবরি, প্রতিটি ক্ষেত্রে, সারা বিশ্ব জুড়ে সেক্যুলার এস্টাবলিশমেন্ট সবসময় ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে এবং নেবে। প্রয়োজনে তারা তাদের নিজেদের বানানো আইনকানুন দর্শন ছুড়ে ফেলে দেবে।

সেক্যুলার রাষ্ট্র কাঠামোর অস্তিত্বের উদ্দেশ্যই হল আমাদের ধর্ম পালনে এবং ধর্ম বাস্তবায়নে বাঁধা দেয়া। সেটা হোক কথা দিয়ে, আইন বানিয়ে কিংবা বন্দুকের নলের জোরে। হোক মসজিদের ধ্বংসস্তূপ, ছিড়ে ফেলা নিক্বাব কিংবা লাশের ওপর দাঁড়িয়ে। এটাই আমাদের আজকের বাস্তবতা। এ বাস্তবতার অনেক প্রমাণ আমরা আগে পেয়েছি। বাবরি মসজিদের রায়ের মাধ্যমে আরো একটা প্রমাণ আজ আমরা পেলাম।

এই বর্তমানে অবস্থান করে যারা সেক্যুলার রাষ্ট্র কাঠামোর মধ্যে ইসলাম ও মুসলিমদের ভবিষ্যৎ দেখেন, কিংবা ‘ধর্মীয় স্বাধীনতার’ বায়বীয় কনসেপ্টের দোহাই দিয়ে এ রাষ্ট্রব্যবস্থাকে দারুল আমান প্রমাণে কসরত করেন, তারা হয় পরাবাস্তব কোন জগতের বাসিন্দা অথবা ইচ্ছেঅন্ধত্ব বরণ করা দলের লোক। এবং এধরনের নির্বুদ্ধিতা অথবা উন্মাদনা সহ্য করার মতো বিলাসিতার সময় উম্মাহর অনেক আগেই ফুরিয়ে গেছে।