অনেক সময় আমরা যুলুম, অবিচার ঘটতে দেখি। বেশির ভাগ মানুষ এমন পরিস্থিতিতে সঠিক কাজটা করতে পারে না। ‘আমার এখন কী করা উচিত’—এ প্রশ্নের উত্তরটা ঠিক বুঝে উঠতে পারে না মানুষ। এমন সময়ে কী করণীয় তা বোঝা এবং তা করতে পারা বান্দার প্রতি আল্লাহ -এর সবচেয়ে বড় রাহমাহগুলোর একটি।
এমন পরিস্থিতিতে অনেক মানুষের মনে সংশয় মাথাচাড়া দেয়। প্রশ্ন জাগে - ‘কেন আল্লাহ এত-সব অন্যায় অবিচার হতে দিলেন?’
অন্তরে এ ধরনের প্রশ্ন জড়ো হওয়ার ফলাফল হলো আল্লাহ সম্পর্কে মন্দ ধারণা করা। যার ফলে তৈরি হয় অসহায়ত্ব ও হতাশার অনুভূতি। সংশয়ে ভোগা মানুষের জন্যে এই অসহায়ত্ব আর হতাশা আবির্ভূত হয় নতুন এক পাহাড়সম বোঝা হয়ে। একের পর এক ঝড় বইতে থাকে মনের ঘরে। মন হয়ে পড়ে অবশ, মানুষ হয়ে যায় নিষ্ক্রিয়। আর ওদিকে সমাজে বাড়তে থাকে অন্যায় ও অবিচার।
কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে রাহমানুর রাহীম যাকে পথ দেখিয়ে দেন, তাঁর প্রতিক্রিয়া কেমন হয়? সে নিজেকে প্রশ্ন করে,
‘আমার দায়িত্ব কী?এ মুহূর্তে আমার করণীয় কী? এই অন্যায় ও অবিচারের মোকাবিলায় আমার পক্ষে কী করা সম্ভব?
সে বোঝে, অন্যায়-অবিচারের মাত্রা যত বেশি হবে তাঁর দায়িত্বও তত বাড়বে। পরিস্থিতি যতই প্রতিকূল হবে তাঁর সংকল্প তত দৃঢ় হতে হবে। যে বান্দা এমন অবস্থায় হিদায়াতের ওপর অবিচল থাকবে, রাব্বুল আলামীন তাঁকে দিয়ে কাজ করিয়ে নেবেন। তাঁকে দেখাবেন অসাধারণ সব ফলাফল। সে অবাক বিস্ময়ে দেখবে তাঁর কথা ও কাজের অপ্রত্যাশিত ফলাফল। সে দেখবে তাঁর কাজের প্রভাব এতদূর ছড়িয়েছে, যা তাঁর কল্পনাতেও ছিল না। মহান আল্লাহ তাঁর কাজে বারাকাহ দেবেন। আমাদের কাজ তো শুধু চেষ্টা করা, সফলতা দেয়ার মালিক আল্লাহ।
আর এ সবই সম্ভব হবে; কারণ, এই ব্যক্তি আল্লাহর হিকমাহ ও রাহমাহ নিয়ে সন্দেহ-সংশয়ে সময় নষ্ট করেনি। সে কাজ করেছে। সংশয় আর হতাশার চক্রে বাঁধা না পড়ে সে নিজের দায়িত্ব খুঁজে নিয়েছে। রাব্বুল আলামীন যে দায়িত্ব তাঁর সামনে দিয়েছেন নিষ্ঠার সাথে সে তা পালন করে গেছে। ভরসা রেখেছে আল্লাহর নির্ধারিত তাকদিরের ওপর। নিশ্চয়ই তিনি প্রজ্ঞাবান ও সর্বজ্ঞানী।
আর এ কারণেই সে আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য পেয়েছে। আল্লাহ বলেন:
مَا أَصَابَ مِن مُّصِيبَةٍ إِلَّا بِإِذْنِ اللَّـهِ ۗ وَمَن يُؤْمِن بِاللَّـهِ يَهْدِ قَلْبَهُ ۚ وَاللَّـهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ
আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কোনো বিপদই আপতিত হয় না। যে আল্লাহর প্রতি ঈমান আনে, আল্লাহ তাঁর অন্তরকে সৎপথে পরিচালিত করেন। আল্লাহ প্রত্যেক বিষয়ে সর্বজ্ঞ। [তরজমা, সূরা আত-তাগ্বাবুন, ১১]
এবং তিনি বলেন:
لَا يُسْأَلُ عَمَّا يَفْعَلُ وَهُمْ يُسْأَلُونَ
তিনি (আল্লাহ) যা করেন, সে ব্যাপারে তাঁকে প্রশ্ন করা যাবে না; বরং তাদেরই প্রশ্ন করা হবে। [তরজমা, সূরা আল-আম্বিয়া, ২৩]
বিপর্যয়ের সামনে মানুষ হয় ভেঙে পড়ে অথবা প্রতিরোধ করে। এ সময়টাতে মানুষ কী সিদ্ধান্ত নেয় তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি হলো সন্ধিক্ষণ। এ মুহূর্তে শয়তান আপনাকে আক্রমণ করবে। মহান আল্লাহর সম্পর্কে সংশয়-সন্দেহের চোরাবালিতে টেনে নিয়ে যাবার জন্য ক্রমাগত ওয়াসওয়াসা দিতে থাকবে আপনার অন্তরে। তাকে শক্ত হাতে প্রতিহত করুন এবং বলুন :
“কোনটি উত্তম তা আল্লাহই ভালো জানেন এবং তিনি তাঁর বান্দাদের প্রতি পরম করুণাময়। নিশ্চয়ই তিনি মহা প্রজ্ঞাবান।”
আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো নিজেকে প্রশ্ন করা :
“আমার ভূমিকা কী? আমার এখন কী করা উচিত?”
নিঃসন্দেহে আল্লাহ যেকোনো মন্দ থামিয়ে দিতে, যেকোনো যুলুম বন্ধ করতে সক্ষম। কিন্তু আল্লাহ বলে দিয়েছেন, তিনি ‘…একজনকে অন্যের দ্বারা পরীক্ষা করতে চান।’তিনি দেখতে চান তাঁর ক্বাদরের ফায়সালা কীভাবে আমরা গ্রহণ করি। তিনি যাচাই করতে চান বিপদের মুখোমুখি হয়ে আমরা কেমন আচরণ করি। তাই এই সন্ধিক্ষণ গুলোতে নিজের করণীয়ের দিকে মনোযোগী হোন। সচেষ্ট হোন নিজ দায়িত্ব পালনে। শয়তানকে সুযোগ দেবেন না আপনাকে হতাশার চোরাবালিতে টেনে নিয়ে যাবার।
আয়নাঘর, ড. ইয়াদ কুনাইবী হাফিযাহুল্লাহ