স্বৈরাচার, ঔপনিবেশিক শক্তি, সাম্রাজ্য কিংবা অভিজাতশ্রেণী যখন কারো ওপর শক্তি প্রয়োগ করে তখন তাদের একটা অজুহাত লাগে। এমন কোন আদর্শ বা চেতনার দরকার হয় যা দিয়ে নিজেদের আগ্রাসনকে আড়াল করা যাবে। জাস্টিফাই করা যাবে। রোমান ক্যাথলিক চার্চ যখন মুসলিম বিশ্বের বিরুদ্ধে ক্রুসেইড শুরু করেছিল তখন অজুহাত ছিল ধর্ম। পবিত্র ভূমি এবং ক্রিসেনডোমের রক্ষা।

মুক্তিকামী ফিলিপিনোদের বিরুদ্ধে চালানো অ্যামেরিকার আগ্রাসনকে বিখ্যাত লেখক রুডইয়ার্ড কিপলিং আদর করে বলেছিলেন ‘সাদা মানুষের বোঝা’। দুনিয়ার সব অশ্বেতাঙ্গ জাতিকে উন্নতি ও উন্নয়নের আলো দেখানো হল সাদা মানুষের দায়িত্ব। তাদের শাসন করে, জোর করে, মেরেকেটে হলেও আলো দেখাতেই হবে। এটা সাদা মানুষের বোঝা।

ফ্রেঞ্চ আর পর্তুগিজ ঔপনিবেশিকরা তাদের লুটপাট, হত্যা আর ধর্ষনের উৎসবের নাম ছিল ‘সিভিলাইযিং মিশন’, ‘সভ্য করার অভিযান’ সাদা মানুষরা আসলে লুটপাট করছে না। তারা পৃথিবীর নানা প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অসভ্য মানুষদের সভ্য করে তুলছে।

প্রতিটা ক্ষেত্রে একই প্যাটার্ন। ক যখন খ এর ওপর আগ্রাসন চালায়, তখন সেটা ‘খ’ এর ভালোর জন্যই করে। ক, নির্দোষ। নিপাট ভালোমানুষ। এসবের পেছনে তার নিজের কোন স্বার্থ নেই। কেবল অন্যের কল্যাণের জন্য সে নিস্বার্থভাবে জনসেবামূলক এই লুটতরাজ আর জেনোসাইড চালাচ্ছে।

আধুনিক সময়ে অ্যামেরিকা আর তার মিত্ররাও এই একই স্ক্রিপ্ট ব্যবহার করে আসছে। অ্যামেরিকা যখন মুসলিম বিশ্বে আগ্রাসন চালায়, কোটি কোটি মুসলিমদের হত্যা করে, ইসলামকে বদলে দেয়ার জন্য পরিকল্পনা করে – তখন সেটা মুসলিমদের ভালোর জন্যই করে। মুসলিমদের কাছে গণতন্ত্র আর মানবতা পৌছে দেবার জন্য করে। মুসলিমদেরকে স্বাধীনতা, সাম্য আর ন্যায়বিচার শেখানোর জন্য করে। এখানে অ্যামেরিকার কোন স্বার্থ নেই। সে শান্তিকামী। নিপাট ভালোমানুষ। শুধু শুধু মানুষ ওকে ভুল বোঝে।

বাস্তবতা হল গণতন্ত্র, মানবতা, স্বাধীনতা আর সাম্য – মানুষের বানানো নিস্প্রাণ কিছু মূর্তি ছাড়া আর কিছুই না। যখন প্রয়োজন হয় তখন এই মূর্তিগুলোর দোহাই দিয়ে ওরা আমাদের আক্রমন করে। এ মূর্তিগুলোর গুণকীর্তন করে। সবাইকে এ মূর্তিগুলোর উপাসনা করতে বাধ্য করে। আবার যখন দরকার পড়ে তখন নিজেরাই এ মূর্তিগুলো ভেঙ্গে ফেলে।

এগুলো শুকনো খেজুর দিয়ে বানানো মূর্তির মতো। যখন ইচ্ছে ইবাদত করে, যখন ইচ্ছে খেয়ে ফেলে।