১। “ফাতিমা নামের কেউ কাফির হয়ে যাবে, যদি সে সিদ্ধান্ত নিয়ে যাকাত না দেয়, বা রামাদানের সিয়াম পালন না করে। অথচ সে ভালো করে জানে কুরআনের বহু জায়গায় সলাতের সাথে যাকাত আদায় করতে বলা হয়েছে, রোজা রাখা ফরজ করা হয়েছে।”
[“পড়ো”, পৃষ্ঠা ৭১, ওমর আল জাবির; (শরীফ আবু হায়াত অপু), সরোবর/সমকালীন প্রকাশনী।]

[ পিডিএফ লিঙ্ক ]

২। বিশিষ্ট তাবেয়ী আব্দুল্লাহ ইবন সাকিক রাহিমাহুল্লাহ বলেনঃ
"নবীর ﷺ সাহাবিগণ নামায ব্যতীত অন্য কোন আমল ত্যাগ করার কারণে ব্যক্তি কাফিরে পরিণত হয় বলে মনে করতেন না।”

তিরমিযী ও আল হাকীম এটি বর্ননা করেছেন এবং বুখারী ও মুসলিমের শর্তানুযায়ী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।
https://islamqa.info/en/5208

স্বেচ্ছায় রোযা না রাখা ব্যক্তি কাফির না যতোক্ষন সে এগুলোর ফরয হওয়ার বিষয়টিকে অস্বীকার করছে। এগুলোর ফরয হওয়া অস্বীকার করা কুফর। আমল ত্যাগ করা না - এটা আহলুস সুন্নাহর আক্বিদা।

আমি বলছি না আমার কাছ থেকে ইলম গ্রহণ করতে। নিজের থেকে কোন কিছু বলছিও না। আমি আলিম ও সালাফদের বক্তব্যসহ একটা নির্দিষ্ট অভিযোগ তুলছি। আমার কথা গ্রহণ করার কোন প্রয়োজন নেই। কিন্তু প্রকাশিত বইয়ের ব্যাপারে কোন অভিযোগ থাকলে, বিশেষ করে দ্বীন ইসলাম সংক্রান্ত কোন বিষয়ে ভুলের অভিযোগ থাকলে অবশ্যই অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে লেখক, প্রকাশক ও সংশ্লিষ্টরা বাধ্য। শার’ঈ অবস্থান থেকে তো অবশ্যই, সাধারণ রীতি ও কমনসেন্সের দিক থেকেও। কাফির, সেকুলাররাও তাদের বইতে– কোন ভুলত্রুটি সহৃদয় পাঠকের চোখে পড়লে আমাদের জানাবেন – জাতীয় কথা লিখে দেয়।

৩। পড়ো - বইয়ের এ ভুলটির ব্যাপারে তিনবার বইটির প্রকাশনার সাথে সংশ্লিষ্টদের আমি ব্যক্তিগতভাবে জানিয়েছি। প্রথমবার বইটির একজন লেখক, যিনি সরোবর পাবলিকেশনের সাথেও যুক্ত, তার সাথে ফেইসবুকে ইনবক্সে কথোপকথনের সময়। দ্বিতীয়বার একই ব্যক্তির সাথে সিয়ান পাবলিকেশনের অফিসে। সিয়ান পাবলিকেশনের আবু তাসমিয়া ভাই, Mohammad Rakibul Hasan ও Salauddin Shuvro ভাই – এ কথোপকথনের সাক্ষী। তৃতীয়বার সমকালীন প্রকাশনীর সাথে যুক্ত একজন জনপ্রিয় লেখকের সাথে মেসেঞ্জারে কথোপকথনের সময়। তিনি নিজেই আমাকে মেসেঞ্জারে ফোন দিয়ে বলেছিলেন –

পড়োর ব্যাপারে কিছু ভুল থাকার কথা আপনি বলেছিলেন বলে আমাকে জানানো হয়েছে। বিষয়গুলো যাচাই করে দেখার দরকার ছিল কিন্তু তাড়াহুড়োর কারণে এবার এগুলো চেক করা হয়নি।

এটা ভারবাটিম কৌট না, তবে যতোদূর আমার মনে পড়ে, এটা তার বক্তব্যের একটি অ্যাকুরেট রিপ্রেসেন্টেইশান। এই কথোপকথনের সময়ও আমি সুনির্দিষ্টভাবে এই লাইনগুলোর কথা উল্লেখ করেছি। উক্ত লেখক সম্ভবত সমকালীন প্রকাশনের সাথে তার সংশ্লিষ্টতার কথা প্রকাশ করতে চান না, অথবা চাইলেও আমার জানা মতে তিনি নিজে এখনো সম্ভবত বিষয়টি প্রকাশ করেননি, তাই আমি তার নাম উল্লেখ করলাম না। এই তিনটি ঘটনার সত্যতার ব্যাপারে আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আর আমি আল্লাহর সামনে এ সাক্ষ্য নিয়ে হাজির হতে রাজি বি’ইযনিল্লাহ ‘আযযা ওয়া জাল।

৪। এতোবার সরাসরি সংশ্লিষ্টদের কাছে বিষয়টি জানানোর পর কীভাবে এটা সংশোধন করা হয় না, এটা যে ভুল সেটা স্বীকার করা হয় না, সংশোধনের ক্ষেত্রে কোন অপারগতা থেকে থাকলে সেটা পাবলিকলি প্রকাশ করা হয় না, নিদেনপক্ষে অনলাইনে জানানো হয় না, বরং ঔদ্ধত্যের সাথে বলা হয় কোন ভুল নেই, কোন ভুলের কথা বলা হয়নি, সংশ্লিষ্টদের জানানো হয়নি, শর‍য়ী সম্পাদনা হয়েছে তাই ভুল নেই, ইত্যাদি – সেটা বোধগম্য না। যদি এটাকে ভুল মনে না করা হয়, তাহলে কেন ভুল মনে করা হচ্ছে না সেটাও ব্যাখ্যা করা হয়নি।

সবচেয়ে দুঃখজনক ব্যাপার হল একাধিকবার সরাসরি জানানোর পরও সংশোধন তো দূরে থাক, ভুল স্বীকার করার মানসিকতা কিংবা সদিচ্ছার ছিটেফোঁটা গত দু’বছরে এই বই এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট কারো মধ্যে দেখা যায়নি। বরং অনেকের কাছ থেকে বারবার ঔদ্ধত্য, দম্ভ, হাসিতামাশা এবং অনর্থক অপ্রাসঙ্গিক কথা শোনা গেছে। হতে পারে খুব আত্মবিশ্বাসের সাথে যারা "ভুল নেই, ভুল জানানো হয়নি" বলে গেছেন/যাচ্ছেন তারা সরাসরি বইয়ের সাথে যুক্ত না। কিন্তু সংশ্লিষ্ট যাদের জানানো হয়েছে তাদেরকেও দেখা গেলো না অতি উৎসাহীদের ভুল শুধরে দিতে। কোন জাতের “দাওয়াহয়” আল্লাহর কালামের ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে ভুলের ব্যাপার কীভাবে এতো হালকাভাবে দেখা সম্ভব, আল্লাহই ভালো জানেন।

৫। যদিও এ ভুলটি ইমান, কুফর ও তাকফির সংক্রান্ত একটি বড় ধরণের ভুল, কিন্তু সার্বিক বিচারে এটা তুলনামূলকভাবে অনেক ছোট ভুল। এর চেয়েও আরো মারাত্মক ভুল মূল লেখকের ওয়েবসাইটের অন্যান্য লেখায় ছিল, এবং এখনো আছে। এই লেখারই অসম্পাদিত সংস্করণে বলা হয়েছিল - পাশের বাড়ির গৌতমকে কাফির বলা যাবে না, চার্চের ফাদারকে কাফির বলা যাবে না। কাফির হল শুধু ওই ব্যক্তি যে অন্তরে স্পষ্টভাবে জানে আল্লাহ সত্য এবং কুরআন সত্য, কিন্তু তাও অস্বীকার করে। এর বাইরে অন্যদের কাফির বলা যাবে না।

শরীয়াহ সম্পাদনা করে গৌতম আর ফাদারের মুসলমানিত্ব বাদ দেয়া হয়েছে, কিন্তু ফাতিমার ওপর তাকফির আর বাদ দেয়া হয়নি।

এধরনের লোক এখন কুরআনের ব্যাখ্যা করছে। সেই ব্যাখ্যা ব্যাপকভাবে প্রমোট করা হচ্ছে, এবং বারবার দম্ভের সাথে বলা হচ্ছে, এখানে কোন ভুল নেই। এতো মানুষ বই পড়লো, প্রমোট করলো, কিন্তু ভালোটা গ্রহণ আর খারাপটা বর্জনের কথা বলা ভাইদের কারো চোখে এই খারাপটা চোখে পড়লো না। আল্লাহর রাসূল ﷺ সত্য বলেছেন, শেষ যুগের একটি চিহ্ন হল মানুষ রুয়াইবিদাহর কাছ থেকে জ্ঞান নেবে। আর কুরআনের আয়াতের ব্যাখ্যার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জ্ঞান আর কোনটি?

৬। এগুলো কোন আদর্শিক, পদ্ধতিগত বা “মানহাজগত” মতপার্থক্য না। দ্বীনের মৌলিক বিষয়ে ভুল। যে ব্যক্তি পদ্ধতিগত মতপার্থক্য আর দ্বীনের মৌলিক বিষয়ে ভুল - এ দুটোর পার্থক্য বোঝে না, সম্ভবত তার এ বিষয়ে কথা বলা উচিৎ না।

৭। ফুদাইল ইবন ইয়াদ রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন –
বিনয় ও নম্রতা হল সত্যের সামনে নিজেকে বিনীত করা এবং সেটা আর কাছ থেকেই আসুক না কেন গ্রহণ করা। বিনয় হল, আপনি সত্যকে গ্রহণ করবেন যদিও সেটা কোন শিশু অথবা সবচেয়ে জাহিল ব্যক্তির কাছ থেকেও আসে। [মাদারিজ আস-সালিকিন, ২/৩৪২]

৮। ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম রাহিমাহুল্লাহ বলেন –
বান্দা দুই কারণে আযাবের উপযুক্ত হয়।

ক)দলিল প্রমাণ থেকে বিমুখ হওয়া এবং দলিল-প্রমাণের ওপর এবং এর দাবির ওপর আমলের ইচ্ছা পোষণ না করা।

খ) দলিল সাব্যস্ত হবার পরেও হঠকারীতা অবলম্বন করা এবং দাবী অনুযায়ী আমলের ইচ্ছা পোষণ না করা।

প্রথমটি কুফরুল ই’রাদ্ব (বিমুখতামূলক কুফর) আর দ্বিতীয়টি হল কুফরুল ইনাদ (হঠকারীতামূলক কুফর)। [ত্বরীকুল হিজরাতাইন, ৩৮৪ পৃষ্ঠা]

৯। চিন্তার অসততার একটা চিহ্ন হল মূল বক্তব্যকে অ্যাড্রেস না করে, নানা অপ্রাসঙ্গিক বিষয়ের অবতারণা করা। যে ব্যক্তি চিন্তার ক্ষেত্রে সৎ, তাকে অপছন্দ করলেও হয়তো তার সাথে ফলপ্রসূ কোন উপসংহারে পৌছাতে পারবেন। কিন্তু যে আদর্শিক ও বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে অসৎ তার সাথে কথা বলেই কখনোই কোন সমাধানে পৌছাতে পারবেন না। কারণ তার উদ্দেশ্য হল যেকোনভাবে নিজেকে ঠিক প্রমাণ করা। যদি কেউ সত্য স্বীকার করতে না চায়, যদি কারো লজ্জা না থাকে তাহলে সে দিনের আলোর ব্যাপারেও দলিল চাইবে, এবং সেই দলিলও তার কাছে যথেষ্ট হবে না।

১০। নির্বোধের সাথে তর্ক করবেন না। কারণ প্রথমত, দূর থেকে মানুষ বুঝবে না নির্বোধ কে। দ্বিতীয়ত, সে আপনাকে তার নিজের পর্যায়ে নামিয়ে আনবে, তারপর নিজের অভিজ্ঞতা দিয়ে আপনাকে পরাজিত করবে।

এপ্রিল, ২০১৮